স্বাধীনতার প্রথম উদিত সূর্য "
শহীদ মঙ্গল পান্ডে"
শহীদ মঙ্গল পান্ডের জন্ম ১৯ জুলাই, ১৮২৭ আর মৃত্যু ৮ এপ্রিল, ১৮৫৭। তার আদি বাড়ি ছিল উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার নাগওয়া গ্রামে।
ইংরেজ কোম্পানি সরকারের বিরোদ্ধে সিপাই বিদ্রোহ বা জাতীয় মহাবিদ্রোহের প্রথম সূত্রপাত ঘটেছিল মঙ্গল পান্ডের হাত ধরে,কলকাতার উপকন্ঠে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরে। সিপাইদের প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থানের ডাক দেন সিপাই মঙ্গল। বিদ্রোহী মঙ্গলকে নিবৃত্ত করতে আসা দুই ইংরেজ অফিসার অ্যাডজুট্যান্ট লেফটেন্যান্ট বাগ এবং সার্জেন্ট মেজরকে প্রকাশ্যে হত্যা করে বিদ্রোহের সূচনা করেন। ইংরেজ বাহিনী কর্তৃক ঘেরাওয়ের পূর্বমুহূর্তে আত্মসমর্পনের বদলে বন্দুকের গুলিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল মঙ্গল পান্ডে, পরে গুলিবিদ্ধ মঙ্গল পান্ডেকে হসপিটালে ভর্তি করেন ইংরেজ সরকার। সুস্থ হওয়ার পর প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয় ১৮৫৭ সালের ৮ এপ্রিল। ইংরেজ অফিসারদের আদেশ অমান্য করা ও মঙ্গল পান্ডেকে নিবৃত্ত না করে সহযোগীতার অপরাধে অপর এক ভারতীয় সিপাই ঈশ্বরী প্রসাদ পান্ডেকে ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ, রোববার অপরাহ্নে বারাকপুর সৈনিক নিবাসে ফাঁসি দেয় ইংরেজ সরকার।
কলকাতার ব্যারাকপুরে সিপাইদের প্যারেড গ্রাউন্ডে ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থানের প্রথম প্রকাশ্যে ডাক দিয়েছিলেন সিপাই মঙ্গল পান্ডে।
মঙ্গল পান্ডে প্যারেড গ্রাউন্ডের সমস্ত সেপাইদের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন, “ভাইসব, আর সময় নেই! যদি নিজেদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য, ধর্ম ফিরিঙ্গীর হাতে দলিত করতে না চাও তবে এগিয়ে এস। ধর কৃপাণ!”
“বেরিয়ে এসো, বেরিয়ে এসো ভাইসব। ফিরিঙ্গীর পায়ের তলায় আর কতদিন পড়ে থাকবে! ওরা আমাদের সোনার দেশ লুটেপুটে খাচ্ছে, আর আমরা না খেয়ে মরছি। ওরা আমাদের ধর্মের উপর হাত দিয়েছে, আমাদের জাতিভ্রষ্ট করছে। ভাইসব ফিরিঙ্গীদের মারো, একটা একটা করে সব ব্যাটাকে মারো; ফিরিঙ্গীদের খতম করে দেশকে স্বাধীন কর”।
মঙ্গল পাণ্ডে ব্যারাকপুরে এভাবেই সিপাহী বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। যে বিদ্রোহ খুব শীঘ্রই মিরাট, দিল্লি এবং ভারতের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি এটা সারা বাংলাদেশ জুড়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। চট্টগ্রাম ও ঢাকার প্রতিরোধ এবং সিলেট, যশোর, রংপুর, পাবনা ও দিনাজপুরে এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।
১৮৫৭ সালের ১১ মে মিরাট থেকে তিনশ’ বিদ্রোহী সিপাই দিল্লি এসে ৪৯ জন ব্রিটিশ নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে এবং দিল্লির দখল হাতে নিয়ে বাহাদুর শাহ জাফরকে মুঘল সম্রাট হিসাবে ঘোষণা করে। সম্রাটকে তাঁরা এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ জানান। অবস্থার চাপে পড়ে তিনি রাজি হলেও কর্তৃত্ব থেকে গিয়েছিল সিপাইদের হাতে। যদিও সকল আদেশ-নির্দেশ তাঁর নামে, তাঁর সিল-মোহরসহ বেরিয়েছিল। সৈনিক ও মোঘলদের টানাপোড়নের মাঝে কয়েক মাসের মধ্যে বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়। ১৮৫৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ইংরেজরা দিল্লি পুনর্দখল করে এবং হাজার হাজার বিদ্রোহী সৈনিককে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে।
১৮৫৭ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের পদাতিক বাহিনী প্রকাশ্য বিদ্রোহে মেতে ওঠে এবং জেলখানা হতে সকল বন্দীদের মুক্তি দেয়। তারা অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ দখল করে নেয়। কোষাগার লুণ্ঠন করে এবং অস্ত্রাগারে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা ভারতীয় সমাজে যে জুলুম-নিপীড়ন চালায় তারই অনিবার্য প্রতিক্রিয়া ছিল এই ঐতিহাসিক সিপাহী বিদ্রোহ। যে বিদ্রোহের শুরুটা করেছিলেন মঙ্গল পান্ডে।
লেখনঃ
মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস (অনার্স) এমএসএস(অর্থনীতি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ভাল লাগল
ReplyDelete