বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও হযরত মাওঃ আবদুল মতিন (রহঃ)
১৯৭৪ সালে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং চলছে, আলোচনার বিষয় দলীয়ভাবে বিভিন্ন দিবস পালন প্রসঙ্গ, প্রস্তাবনা আসে মাও সেতুং, কাল মার্কস, লেলিনসহ অনেকের জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনের। হঠাৎ করে একজন প্রস্তাব করেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম- মৃত্যু দিনটি পালন করার। কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই চুপ। একজন অন্যজনের মুখ দেখাদেখি করছে, সিদ্ধান্ত এলো "না"। প্রস্তাবকারী উচ্চশোরে বলে উঠলো, যেখানে আমার প্রিয় নবীর অসম্মান হয়, যারা মুসলিম হয়ে অমুসলিমদের মত আচরণ করে, আমি তাদের সাথে নেই, থাকতে পারিনা, এবং থাকবোনা। একথা বলেই লোকটি বৈঠক থেকে আল্লাহু বলে উঠে দাঁড়ান। সেদিনের সেই লোকটি হলেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওঃ আবদুল মতিন (রহঃ) সাহেব। যিনি ছিলেন, একসাথে ইসলামিক পন্ডিত ও রাজনীতিবিদ। ইসলাম ও জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ে এদেশে হযরত ওমর (রাঃ) মত করে সাম্যের সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। আর ওমরীয় সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, শোষণ ও দারিদ্রমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭৪ সাথে জাসদ থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও মেজর জলিলের একান্ত কাছের। রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের বিরোদ্ধ তিনি ছিল সোচ্চার। যে কারনে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। বাকশালের বিরোদ্ধেও তার কন্ঠ ছিল সোচ্চার। পরবর্তীকালে পচাত্তরের কালো আইনের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করলে, এদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। লেবার পার্টি, জাসদ, মুসলিম লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ও হরণ করা হয় বাক স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশের উপর নেমে আসে অন্ধকারের কালোথাবা। আর এই অন্ধকার থেকে পুরোজাতি মুক্ত হয় ৭ই নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে। বিপ্লবের মহানায়ক হলেন, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। তিনি এসেই একদলীয় শাসনের উচ্ছেদ করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দল নিয়ে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠনে জিয়াউর রহমানের সাথে মাওঃ মতিন (রহঃ) এর মুখ্য ভুমিকা রাখেন। জাতিকে মহামারি ও দুর্ভিক্ষপীড়ন থেকে রক্ষার জন্য ২০ দফা ঘোষণা করেন এবং আধুনিক চাষাবাদের জন্য খাল খননসহ নানামুখী কর্মকান্ড হাতে নেন। জিয়াউর রহমানে জাগদল গঠন করেন এবং হযরত মাওঃ আবদুল মতিন (রহঃ) সাহেবে গড়া সংগঠন লেবার পার্টি ও মাওঃ মতিন হয়ে উঠেন, জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক সহচর ও সহযোদ্ধা। (চলবে)
লেখকঃ
মহসীন ভূঁইয়া
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ লেবার পার্টি
No comments:
Post a Comment