Monday, December 24, 2018

ধ্যান হলো প্রভু প্রাপ্তির সূচনা পথঃ মুহাঃ মহসীন ভূঁইয়া


ধ্যান হলো পেশিক্রিয়া আর স্নায়ুর ক্রিয়ার শিথিলায়নের মাধ্যমে আত্মনিমগ্ন হওয়া অর্থাৎ দেহ আর মনকে নিয়ন্ত্রণ করে অস্থির মনকে স্থির করা ও মনোযোগ একাগ্র করার প্রক্রিয়া।
ধ্যান হলো দেহ আর মনের শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম। এটা এমন এক যোগ ব্যায়াম, দেহ থেকে দেহের কাম এবং মনের থেকে মনের কামকে নিয়ন্ত্রণ করে এক দৃষ্টি ও লক্ষ্যে নীরবে বসে সুনির্দিষ্ট অনুশীলন। ধ্যানের মাধ্যমে একদিকে মনোযোগ, সচেতনতা, নিজের প্রতি ভালোবাসা, সৃজনশীলতা, সুস্থতা ও প্রেম বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে কপটতা, হিংসা, কামুকতা, লোভ, অহংকার ও অসুস্থতা দুর করে মনকে স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে এবং প্রশান্তি ও সুখানুভূতি বাড়ানোর পাশাপাশি ঘটায় অন্তরের মহান জাগরণ।
ধর্মীয় শাস্ত্রে ধ্যান বলতে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে, মনকে মুক্ত করে কোনো ঐশী শক্তিতে সমর্পিত হওয়া প্রভৃতি, ইসলাম ধর্মের নিজের ভিতর নিজেকে খোজার মাধ্যমে প্রভুর খোজ করা বা আপন পরিচয় সন্ধানের জন্য প্রভুকে সন্ধান করার উত্তম মাধ্যম হলো ধ্যান। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির আগে, যখন দুনিয়াতে কুরআন, নামায, ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান আসেনি, তখন তিনি আপন মনে নিজের ভিতরে নিজেকে খোজার মাধ্যমে প্রভুর সন্ধান করার জন্য হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান করতে এবং সেখানেই তিনি আপন প্রভুর ঐশি জ্ঞান লাভ করেন এবং মানবতার কল্যাণের জন্য প্রভুর আদেশ প্রাপ্ত হন। সুতারাং ধ্যান হলো দেহ মনের এমন একটি রেখা, যেখানে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মহা মিলন হয়।
মানব ইতিহাসে সুনির্দিষ্টভাবে ধ্যানের উৎপত্তি কবে হয়েছে, তা অজানা থাকলেও প্রত্নতত্ত্ববিদ ও গবেষকগণ একমত যে, ধ্যান প্রায় ৫০০০ বছর আগে উৎপত্তি লাভ করেছিল। ধ্যান চর্চার সবচেয়ে প্রাচীন দলিল পাওয়া যায় প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের বেদে।টাও ও বুদ্ধের ধ্যান পদ্ধতির বিকাশ ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০-৫০০ সালে।  খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০-১০০ সালে পতঞ্জলির যোগসূত্রে প্রণীত হয় যেখানে অষ্টাঙ্গা ধ্যানের বর্ণনা পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ – খ্রিষ্টাব্দ ২০০ সালে ভগবদ গীতায় লিখিত হয়। যেখানে যোগ বা ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক জীবন যাপনের পদ্ধতি নিয়ে বর্ণনা রয়েছে। আবার মুসলমানদের ধর্ম গ্রন্থ আল কুরআনে নামায কে প্রভুর স্বরণে বান্দার ধ্যান বলা হয়েছে এবং গভীর রাতে প্রভুর জিকির বা স্বরণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে এবং নবী মুহাম্মদ (সঃ) নিজে হেরা পাহাড়ের উপর গুহার ভিতরে রাত - দিনে একা একা নির্জনে বসে ধ্যান করতেন।  ৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জাপানে প্রথম ধ্যান হল খোলা হয়। অষ্টাদশ শতকে ধ্যানের প্রাচীন শিক্ষার অনুবাদ পাশ্চাত্যে পৌঁছায়। বিংশ শতকে ধ্যানের বিভিন্ন মেথড উদ্ভাবিত হয়।
নিয়ম পদ্ধতির ভিন্নতা অনুসারে ধ্যানে প্রকারভেদ বিদ্যমান। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকার হলঃ-
যোগ ধ্যান, অষ্টাঙ্গা ধ্যান, চক্রভেদে ধ্যান, সুফি ধ্যান ও রেচক পূরকে ধ্যান।

মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস (অনার্স) এমএসএস (অর্থনীতি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Friday, December 21, 2018

চাই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশঃ মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া


     "দুর্নীতি দুঃশাসন করবো শেষ
      গড়বো নিরাপদ বাংলাদেশ"

রাজনীতি কি?
রাজনীতি হলো নদীর মত চলমান ও বহমান, যার ভাঙ্গা-গড়া আর উত্থান-পতনের মাঝে সমাজবিপ্লবীদের সৃষ্টি হয়। যার শেষ হয় বিশাল সমুদ্রের মোহনায় মিলনের মাধ্যমে। এখানে হিংসা, হিংস্রতা বা নিচু মানসিক লোকদের কোন স্থান নেই। সত্য, সম্মান এবং শ্রদ্ধাবোধ কাউকে ছোট করেনা, জগতে অশ্রদ্ধা করে কেউ কোনদিন বড় হতে পারেনি, আবার শ্রদ্ধা করলে কেউ ছোট হয়ে যায়না। রাজনীতির মূলমন্ত্র হলো- প্রেম, ভালোবাসা আর মানবিকতার মাধ্যমে বিশ্ব জগতের সেবা করা-
চেতনায় ৭১ বুকে ধারন করে সম্পূর্ণ দুর্নীতি, দারিদ্র ও বেকারত্ব মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে, এদেশকে আধুনিক  প্রযুক্তিনির্ভর কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শোষণহীন, ন্যায় ও সাম্যের সমাজ বিনির্মাণের  লক্ষ্যে- ১৫ বছরের মাস্টার পরিকল্পনা (মেগা পরিকল্পনা) হাতে নিয়ে ৭১-দফা-

১। সম্পূর্ণ দুর্নীতি মুক্ত ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র  গঠনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
২।  অদক্ষ নাগরিকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে সকল কর্মক্ষম নাগরিকদের দেশে বা বিদেশে কাজের ব্যবস্থা করা হবে এবং দক্ষ বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে।
৩। এইচ এস সি পর্যন্ত একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে - আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, কারিগরি শিক্ষা, বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা,ব্যবসা শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক  করা হবে।
৪।রাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া কোন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা বা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা  যাবেনা।
৫।  কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে খাদ্য উৎপাদ বৃদ্ধি করা হবে ও নাগরিকদের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা হবে এবং খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ গঠনের লক্ষ্যে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
৬। নাগরিকদের মৌলিক চিকিৎসার অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরোদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৭।  রাষ্ট্রীয় খরচে কোন নাগরিকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবেনা বা চিকিৎসা ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবেনা।
৮। ভূমিহীন ও স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য  সুদবিহীন ঋণের মাধ্যমে গৃহঋণ প্রকল্প চালু করা হবে।
৯। মাদক মুক্তি দেশ গঠনের লক্ষ্যে, মাদক দ্রব্যের ব্যবহার আমদানি-রপ্তানি ও উৎপাদন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে (তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তারের অনুমতিতে ব্যবহার করা যাবে) এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের চাকুরী প্রদান করা হবেনা।
১০। সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের সময় এবং চাকুরীজীবনে ৫ বছর পরপর ড্রাগ টেস্ট দিতে হবে।
১১। সামরিক ব্যয় কমানো লক্ষ্যে এবং প্রতিটি নাগরিককে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ সবল করে গড়ে তোলার জন্য (৩ মাসের) সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
১২। বাল্য বিয়ে বন্ধ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর আইন প্রণয়ন, সামাজিক অবক্ষয় রোধে প্রচারণা বৃদ্ধি এবং যৌতুক বিহীন বিয়ের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সুদ মুক্ত মেয়াদী ঋণ দেওয়া হবে।
১৩। শিক্ষিত বেকারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সল্প সুদে ৫ লক্ষ টাকা কৃষি বা ক্ষুদ্র শিল্প ঋণ দেওয়া হবে।
১৪। জন্মের কালিন সময় মা ও তার পরিবারের সচেতনতা মুলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং প্রথম সন্তান জন্মের সকল ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে।
১৫। সকল নাগরিকের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং মতা প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, তবে ধর্মহীনদের ক্ষেত্রেও সমান অধিকার থাকবে।
১৬। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বা সংগঠন নিষিদ্ধ করা হবে এবং রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে সমান সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার বজায় থাকবে।
১৭। দেশের সকল নাগরিক বা দল বা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় দিবস গুলো মর্যাদার সাথে পালন করতে হবে এবং জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের সম্মান জানাতে হবে।
১৮। উম্মুক্ত সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অনুমোদন নিতে হবে।
১৯।  রাত ১১টার পর দেশের জাতীয় অনুষ্ঠান ছাড়া শব্দ দোষণ  করে কোন ধরনের অনুষ্ঠান করা যাবেনা।
২০। রাষ্ট্রের কাছে নারী বা পুরুষ বা তৃতীয় লিংগের সবাই নাগরিক এবং বাংলাদেশি বলেই পরিচিত হবে।
২১। পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী বা শারীরিক অক্ষম বিশেষ শ্রেনীর জন্য রাষ্ট্র প্রয়োজনে বিশেষ সুবিধা দিবে।
২২। সন্তান বা সম্পদহীন বয়স্ক নাগরিকদের (আদালতের রায়ে শাস্তি প্রাপ্তরা ছাড়া) বিশেষ ভাতা ও চিকিৎসা ব্যয় সরকারী ভাবে বহন করা হবে।
২৩। কর্মক্ষম প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষার জন্য সরকারি ভাবে (মাসিক একশত টাকা হারে) ৫ লক্ষ টাকার জীবন বীমা চালু করা হবে।
২৪। আয়ক্ষম প্রতিটি নাগরিককে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং বিশেষ কর কার্ড দিয়ে উৎসাহিত করা হবে।
২৫। প্রতিটি জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং জেলা ভিত্তিক উচ্চ শিক্ষার জন্য মেধা ও গরীব ছাত্রদের জন্য উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি চালু করা হবে।
২৬। রাষ্ট্রের অধিনে পরিচালিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ সরকারী করা হবে এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ২০ ভাগ গরীব ছাত্রদের বিনা বেতনে অধ্যায়ন ও ২০ ভাগ সিট গ্রামের ছাত্রদের জন্য থাকতে হবে।
২৭। মুক্তিযোদ্ধা, যোদ্ধাহত ও বীরাঙ্গনা মায়েদের জন্য সরকারি যানবাহন ও চিকিৎসা ব্যয় সম্পূর্ণ ফ্রী থাকবে এবং বেসরকারি যানবাহন ও চিকিৎসা ব্যয় অর্ধেক বা হাপ করা হবে।
২৮। পররাষ্ট্র নীতি হবে সকল দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা, বন্ধুর সাথে বন্ধুর বিরোধ হলে আপোষ করা বা নিরপেক্ষ থাকা।
২৯। আইন, বিচার, শাসন ও নির্বাচন কমিশন  কে শতভাগ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়া হবে। এবং রাষ্ট্র কোন ধরনের বিশেষ সুবিধা নিবেনা।
৩০। ১৫ বছরের পরিকল্পনায় শতভাগ স্বাক্ষরতার হার অর্জন করা হবে। আন্তর্জাতিক মানের বিশেষ গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে এবং এদেশকে শিক্ষাবান্ধব দেশ হিসেবে গড়েতোলা হবে।
৩১। দলীয় বা রাষ্ট্রীয় পদে একজন নাগরিক  তিনবারের অধিক থাকতে বা নির্বাচন করতে পারবেনা।
৩২। সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে, চাকুরী প্রার্থী থেকে আবেদনের সাথে কোন ধরনের অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা এবং সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে একবারের অধিক কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করা যাবেনা
৩৩। সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের বয়স সকল নাগরিকের জন্য ৪০ বছর করা হবে এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ৪২ বছর করা হবে।
৩৪। বিশেষ শ্রেনীর নাগরিক ছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি সকল নিয়োগ সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে হবে, তবে বিশেষ প্রয়োজনে নারী ও পুরুষের কোটা থাকবে।
৩৫। সামরিক বাহিনীকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে এবং নারীদের অংশ গ্রহণ বৃদ্ধি করা হবে।
৩৬। দেশ রক্ষার প্রয়োজনে বিশেষ প্রস্তুতি বৃদ্ধি করা হবে এবং সমসাময়িক আধুনিক বা অত্যাধুনিক অস্ত্রবল ও জনবল তৈরি করা হবে।
৩৭। সরকারি কর্মচারীদের প্রতিবছর সম্পদের হিসাব নিজ বিভাগে জমা দিতে হবে। সম্পদের হিসেবে অতিরিক্ত ব্যবধান হলে দুর্নীতি কমিশনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।
৩৮। সরকারি চাকুরী শেষ হওয়ার ৫ বছর ব্যবধানের আগে কোন ধরনের নির্বাচন করতে পারবেনা এবং ২ বছর ব্যবধানের আগে রাষ্ট্রের অন্য কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেনা।
৩৯।রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ স্পীকার, প্রধান বিচারপতি ও প্রধান বিরোধীদলের নেতা ছাড়া অন্য কাউকে পুলিশ প্রটোকল দেওয়া হবেনা, তবে বিশেষ প্রয়োজনে নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিতে পারবেন।
৪০। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য ৫ বছর মেয়াদের বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করা হবে এবং ট্রাফিক গার্ড বাহিনী নামে একটি আলাদা বাহিনী গঠন ও এই বাহিনীর জন্য আলাদা মন্ত্রনালয় করা হবে।
৪১। নিয়োগ বিভাগ বা কর্ম বিভাগ নামে আলাদা একটি বিভাগ থাকবে, যে বিভাগের মাধ্যমে সরকারি সকল নিয়োগদান হবে ও বেসরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুমোদন দিবে।
৪২। উন্নয়ন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করার জন্য সাবেক বৃহত্তম ১৭ জেলাকে আলাদা প্রাদেশিক মর্যাদা দিয়ে পর্যায়ক্রমে শাসন ব্যবস্থা চালু করা হবে । যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা ও সংসদ ব্যবস্থা থাকবে। 
৪৩। দেশের প্রয়োজনে খনিজ সম্পদ উত্তোলন করা হবে তবে রপ্তানি করা হবেনা।
৪৪। ধর্মীয় অনুষ্ঠার যার যার জাতীয় ও সংস্কৃতির অনুষ্ঠান সবার এই স্লোগানে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক শক্তি মুক্ত সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির বন্ধনের মিলন গঠানো হবে।
৪৫। অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য আমদানিতে শুল্কহার কমানো হবে এবং উৎপাদনে ভর্তুকি দেওয়া হবে।
৪৬।  কৃষি প্রযুক্তির  মালামাল উৎপাদনের উপাদানের উপর আমদানি শুল্কমুক্ত আরো কমানো হবে।
৪৭। শব্দ, পরিবেশ ও বায়ুদূষণ বিরোধী কার্যকর আইন প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা হবে এবং প্রত্যেক জেলায় শহরের বাহিরে আলাদা শিল্প নগরী স্থাপন করা হবে।
৪৮। অপ্রয়োজনীয় বিদেশি মিডিয়া বন্ধ করে দেশের মিডিয়ার প্রচার ও প্রসার করা হবে এবং প্রতিটি চ্যানেলকে একটি নিদিষ্ট বিষয় বিশেষ মাধ্যম হিসেবে প্রচারের অনুমতি প্রদান করা হবে।
৪৯। ক্রীড়াঙ্গনকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখা হবে এবং খেলোয়ারদের জন্য কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হবে।
৫০। প্রবাসীদের আয় ও বিনিয়োগের উপর করের হার কমানো হবে বা প্রয়োজনে তোলে নেওয়া হবে এবং
প্রবাসী ও তার পরিবার সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বিশেষ আইন করা হবে।
৫১। প্রবাসী নাগরিক সুরক্ষা আইন করে বিদেশে বাংলাদেশী প্রবাসী নাগরিকদেরকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে এবং প্রবাসীদের স্ত্রী ও সন্তানকে দেশে বিশেষ আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।
৫২। লেবার ভিসায় শ্রমিক বিদেশ যাওয়ার জন্য বিনা সুদে মেয়াদী  ঋণ দেওয়া হবে। এবং মেয়াদের মধ্যে বিদেশে শ্রমিকের মৃত্যু হলে ঋণ মকুফ করা হবে এবং লাশ দেশে আনার বিমান খরচ সরকার বহন করবে।
৫৩। প্রতিটি জেলা রেলপথ এর আওতাধীন ও প্রতিটি বিভাগে বা প্রদেশে বিমান বন্দর নির্মাণ করা হবে।
৫৪। শতভাগ বিদুৎতায়ন ও লাইন গুলোকে ভূগর্ভে নিয়ে দুর্ঘটনারোধ করে নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।
৫৫। তামাক পণ্য উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হবে  এবং মাদক ও তামাক বিরোধী প্রচার বাড়ানো হবে। মেগা পরিকল্পনায় তামাক ও মাদক মুক্ত দেশ গড়া হবে।
৫৬। পারমাণবিক শক্তিকে মানবতার কল্যাণের জন্য ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে এবং বিদুৎ শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে, দেশের জনগন প্রয়োজন মনে করলে, দেশ রক্ষায় পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার করা হবে।
৫৭। প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্রের সাথে অধিক সুসম্পর্ক স্থাপন করা হবে, আমদানি ও রপ্তানিতে ভারসাম্য আনা হবে এবং বিদেশি মুদ্রা ও সোনার রিজার্ভ বৃদ্ধি করা হবে।
৫৮। সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি, সীমান্তে হত্যা ও চোরাচালান বন্ধ এবং বিজিবিকে অধিক শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করা হবে।
৫৯। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে চতুর্মুখী ভাবে আধুনিকায়ন করা হবে এবং চক্রাকার সড়ক ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। দেশে গাড়ি উৎপাদন শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দেওয়া হবে।
৬০। দল যার যার, দেশ, মাতৃভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন সবার, এই মন্ত্রে জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে।
৬১। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থি দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং রাষ্ট্রীয় গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা হবে।
৬২। চোরাচালান, মাদকপাচার, নারী ও শিশু পাচার এবং অর্থ পাচার বন্ধ করা হবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
৬৩। উন্নয়ন বন্টনের ক্ষেত্রে ইনসাফ ও সমতার সমন্বয় করা হবে এবং আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা হবে।
৬৪। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি হবে পুজিবাদ, সমাজতত্ত্ব ও ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার কল্যাণময় কাঠামোর সমন্বিত  সংযোজনের এমন একটি রুপ, যেখানে ইনসাপ ও সাম্যের সাথে মৌলিক অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই অর্থ ব্যবস্থার নাম হলো- "মিক্স আইডিয়াল ইকোনোমি"
৬৫। বিনোদনের জন্য প্রতিটি জেলায় আধুনিক পার্ক ও চিড়াখানা গড়ে তোলা হবে।
৬৬। ঔষধ শিল্পে মান নিশ্চিত করা হবে এবং প্রধান রপ্তানিকৃত শিল্পে পরিণত করা হবে।
৬৭। পোষাক শিল্পের মাধ্যমে বিশ্ববাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করা হবে।
৬৮। শ্রমিকদের কর্মবীমা ও চিকিৎসা বীমা চালু করা হবে এবং শ্রমিক নিরাপত্তা আইন করা হবে।
৬৯। (নারী-পুরুষ) ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য সমন্বয় করা হবে এবং নারী নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে আইন বাস্তবায়ন করা হবে এবং পুরুষ নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়ন করা হবে।
৭০। সংবিধান পরিপন্থী সকল রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।
৭১। রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে  ন্যায় ও কল্যাণের শাসন প্রতিষ্ঠা, নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ ও আনন্দময় জীবনের জন্য নিরাপদ দেশ গঠন এবং  বর্তমান আধুনিক বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে সর্বাধুনিক কল্যাণকর ও সুন্দর দেশে হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য-
লেখকঃ
মুহাঃ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস (অনার্স) এমএসএস (অর্থনীতি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আত্মার আলোতে স্রষ্টার বসবাস -দেহতত্ত্বঃ মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া


আত্মার আলোতে স্রষ্টার বসবাস-দেহতত্ত্বঃ
(মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া)

মানুষের আত্মা হলো পবিত্র আলো, সে আলো  সৃষ্টির উৎস স্রষ্টার হুকুম থেকে আসে, আত্মা এমন এক আলো যেখানে আলোর স্রষ্টা থাকে। প্রতিটি মানুষ আলোর বাহক বা ধারক, আলোর অবস্থান থাকলেও আকার নেই, সুতারাং আত্মার আকার নেই, আত্মা নিরাকার, অর্থাৎ মানুষের চিন্তায় বা ধারণায় বা জ্ঞানের সীমানায় আত্মার কোন আকার নেই। সেভাবে বলতে গেলে আলোর উৎস বা স্রষ্টারও আকার নেই সৃষ্টির ধারণা বা জ্ঞান চিন্তার সীমানায়। আলোর সাথে প্রদীপের যেমন সম্পর্ক আছে উৎস মূলে, ঠিক তেমনি মানুষের আত্মার সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক । মানুষ নিজ আত্মার আলোর মাধ্যমে  স্রষ্টার ধারক বা বাহক। মানুষ কষ্ট পেলে আত্মাও কষ্ট পায়, আত্মা কষ্ট পেলে স্রষ্টাও কষ্ট পায়। মানুষ আনন্দ পেলে আত্মা আনন্দ পায়, আর আত্মা আনন্দ পেলে আত্মার আলোতে থাকা স্রষ্টাও্ আনন্দ পায়। সুতারাং
মানুষকে কষ্ট পেলে স্রষ্টা কষ্ট পায়, আনন্দ পেলে স্রষ্টা আনন্দ পায়।

মৃত্যুঃ
জন্ম আর মৃত্যুর ফায়সালা জমিনে নয়, আসমানে হয়। জন্মের মত মৃত্যুটাও মানুষকে স্বাভাবিক নিয়মে মেনে নিতে হয়। কার কখন মৃত্যু হবে, কেউ বলতে পারবেনা। আমার বা আপনার, আমাদের সকলকেই মৃত্যুর সাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যু মানে পৃথিবী থেকে প্রস্থান বা চিরবিদায়। আজ পর্যন্ত যত মানুষ দুনিয়াতে এসেছে, তাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। সৃষ্টিশীলের সৃষ্টিনাশ হবেই। এটা আস্তিক বা নাস্তিক সবাই একবাক্যে বিশ্বাস করে এবং মানে। এখন পর্যন্ত কোন নাস্তিক বা মানুষ বা অন্য সৃষ্ট জীব এটা বলেনি যে, আমি আমৃত্যু।  
স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক, কালে বা অকালে মৃত্যু আসবেই। মৃত্যুকে নিয়ে সবারই একটা কৌতূহল আছে, যদিও মরে এর সাদ বা জানার ইচ্ছা কারও নেই। কথায় আছে সবাই বেহেশতে বা স্বর্গে যেতে চায়, কিন্তু কেউ মরতে চায়না। অথচ বেহেশত বা স্বর্গ প্রাপ্তি হয় মৃত্যুর পর। 
এই মৃত্যু আসলে কি ?
এর শতভাগ সঠিক ও বাস্তব জ্ঞান পাওয়া যেত, যদি মৃত্যুর পর আবার জীবিত হয়ে দুনিয়াতে আসা যেত। কিন্তু এটা কি সম্ভব ?  এক কথায় অসম্ভব। মৃত্যুর পর দুনিয়াতে আবার পিরে আসবে এই আশায় কেউ কি মরতে চাইবে  ?  মনে হয় কেউ চাইবেনা। মানুষ আল্লাহ বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করুক বা না করুক। এটা সবাই বিশ্বাস করে যে, মৃত্যুর পর আবার মানুষ হয়ে একই আকারে আর আসবেনা। পৃথিবী থেকে মৃত্যুর মাধ্যমে চিরবিদায় হতে হয়। যদি আসার সুযোগ থাকতো, তাহলে অন্তত মুসলমানদের নবীরা বা হিন্দুদের দেবতারা বা ঈশায়ীদের যীশু সবার আগে আসার সুযোগ পেত। এদের কাউকে যেহেতু স্রষ্টা বা দুনিয়ার নিয়ম মৃত্যুর পর আবার আসার সুযোগ দেয়নি। আমরাতো সাধারণ মানুষ। আমাদের কোন  পূর্ণকর্মের জন্য দিবে ? মৃত্যু হলো এমন এক ধ্বংস বা বিনাশ, যার মাধ্যমে দেহের থেকে প্রাণের বা আমার থেকে আমির প্রস্থান। সৃষ্টিজগতে আমার দেহ পরে থাকে আর আমি প্রাণ দেহ ত্যাগ করে আগের জগতে চলে যাই। 
স্রষ্টাঃ
স্রষ্টার আসন তৈরি হয়েছে জন্ম-মৃত্যুর মাধ্যমে। জন্ম আর মৃত্যু একজন সৃষ্টিকারী ও সৃষ্টির রুপ যেমন প্রমাণ করে, ঠিক তেমনি ভাবে স্রষ্টাতত্ত্বের আদর্শিক প্রমাণ তৈরি হয়। যদি জন্মই অনন্ত হয়, মৃত্যুর বিধান চিরতরে বিনাশ হয়, তাহলে স্রষ্টার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টির কাছে থাকবেনা। প্রতিটি সৃষ্টি নিজেই স্রষ্টার আসনে বসবে। প্রত্যেক সৃষ্টি নিজেই হবে একজন স্রষ্টার দাবিদার। মৃত্যুহীন পৃথিবী জন্মহীন স্রষ্টার সমান। প্রাণের জন্মই হয় মৃত্যু জন্য, জন্ম আর মৃত্যর রহস্য জানা সৃষ্টির জন্য নয়, এটা একান্তই সৃষ্টি সীমার বাহিরে। জন্মের মাধ্যমে যে প্রাণের সৃষ্টি হয়না, দেহের সৃষ্টি হয়। প্রাণের বিনাশ সৃষ্টি জগতে অসম্ভব। পৃথিবী নিজেই সৃষ্ট, তার নিজের মৃত্যু বা ধ্বংস অনিবার্য। প্রাণের সৃষ্টি স্রষ্টালয়ে হয়েছে, মৃত্যু কি করে  সৃষ্টিলয়ে হবে  ?  যার সৃষ্টি হয়, সে স্রষ্টার সৃষ্টিকে মৃত্যু দিতে পারেনা। জন্ম আর মৃত্যু হলো একান্ত স্রষ্টার নির্দেশ বা আদেশ।  এটার বিনাশ সৃষ্টিশীল পৃথিবীতে নয়, বিনাশ হবে সৃষ্টির বাহিরে স্রষ্টার জগতে। প্রাণের জন্মে প্রাণীর নিজ ইচ্ছা বা ক্ষমতা যেমন নেই, প্রাণীর প্রাণ বিনাশের ক্ষমতা তার অধীনে নয়, সৃষ্টিশীল পৃথিবী হলো আগমন আর প্রত্যাবর্তনের একটি চক্রের কাল। এখানে তৈরি বা সৃষ্টি নয়, শুধু আগমন আর প্রত্যাবর্তন হয়। সৃষ্টি যেমন সৃষ্টি করতে পারেনা, তেমনি ভাবে সৃষ্টি চিরতরে বিনাশ বা ধ্বংস করতে পারেনা। সৃষ্টি বা জন্ম যেমন চির অজানা রুপ, মৃত্যু বা চির বিনাশ সৃষ্টিজগতে অজানাই থাকবে। প্রাণের রুপ দেহে স্থায়ী নয়, প্রাণ হলো স্রষ্টার হুকুম আর দেহ হলো প্রাণের ধারক। প্রাণ আর দেহ এক নয়, দু'টার সৃষ্টি এক জগতে হয়নি, এক সময়ও নয়। দেহ তৈরি পৃথিবীতে, এর বিনাশও পৃথিবীতে। আর প্রাণের সৃষ্টি যেহেতু পৃথিবীতে হয়না, বিনাশ কি করে হবে ?  দেহের জন্ম পৃথিবীতে, মৃত্যুও পৃথিবীতে হয়। প্রাণের জন্ম দেহের অজানা, প্রাণের চিরবিনাশ বা চিরতরে মৃত্যুও অজানা। এটা অস্থায়ী দেহে স্থায়ী নয়। পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম হয়না, দেহের সৃষ্টি হয় এবং দেহের মৃত্যু হয়, প্রাণের মৃত্যুও হয়না। প্রাণ দেহের ভিতর আসে এবং দেহের মৃত্যুর মাধ্যমে প্রাণ দেহ ত্যাগ করে। দেহ হলো প্রাণহীন খাচা। এটা সৃষ্টির শুরুতে প্রাণহীন আবার শেষেও প্রাণহীন হয়ে বিনাশ হয়। দেহের মৃত্যু হয় পৃথিবীতে, প্রাণের পৃথিবীতে মৃত্যু হয়না। প্রাণ হলো স্রষ্টার রুপের ধারক,দেহ হলো সৃষ্টির আকার বা রুপ। দেহ বস্তুগত সৃষ্টি, প্রাণ অবস্তুগত শক্তি। দেহের আকার আছে, প্রাণ নিরাকার। দেহ প্রাণহীন হলে মৃত, প্রাণ দেহহীন হলেও মৃত নয়। দেহের অস্তিত্ব পরিবর্তনশীল, প্রাণের নিরাকার রুপ পরিবর্তনশীল নয়। প্রাণের মৃত্যু হবে প্রাণের জন্মের মতই স্রষ্টার হুকুম বা নির্দেশে। প্রাণ দৃষ্টিপটের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শক্তি, দেহ হলো দৃষ্টিগোচর হওয়া মাংসপিণ্ডের আকার। দেহের মৃত্যুতে প্রাণের অস্তিত্ব বিনাশ নয়, দেহ বিনাশ হয়। 
সময়ঃ
সময় আর নদীর বহমান স্রোত ঘড়ির কাটার মতই চলমান। এরা কারো জন্য অপেক্ষা করেনা।পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর স্থির হতে পারে, বন্ধ হতে পারে মানুষের তৈরি আয়োজন। সময়, বহমান নদীর স্রোত আর ঘড়ির কাটা চলবেই। অন্ধজন আলোহীন, তাই বলে সূর্যের আলো কোনদিন বন্ধ হয়নি, হবেওনা। পৃথিবীর শুরু যেহেতু আছে, শেষও হবে একদিন। তবে সময়ের শুরু নেই, শেষও নেই। সময় হলো স্রষ্টার অস্তিত্বশীলতার পথিক বা সিম্বল।  সময়ের মহাকালে আজকের পৃথিবীর সম্পূর্ণ ইতিহাসের ছবিটাকে আমি এক সেকেন্ডের হাজার কোটি ভাগে এক অংশ মনে করতে পারি, বা তার চেয়ে আরো কোটি কোটি গুণ ছোট। অর্থাৎ মানব রচিত সর্বছোট সময়ের খন্ডটি হলো পৃথিবীর সমস্ত জীবনের আয়ুরেখা।  পৃথিবী হলো মহাকাশের হাজার কোটির ছায়াপথ পরিবারের মাঝারি ধরনের একটি ছায়াপথের সদস্যের অন্তর্ভুক্ত।  এক ছায়াপথে হাজার কোটি নক্ষত্র থাকে, আর ঐ নক্ষত্রের একজন হলো সূর্য। সূর্যের মহালয়ে ঘূর্ণিত একটি মাঝারি মানের অংশ হলো পৃথিবী। যার বিশাল পরিধীতে সাতশত কোটি মানুষসহ সকল প্রাণীজগৎ বসবাস করে। সাথে আছে প্রাণহীন মানব রচিত বিশাল কর্মযজ্ঞ।  আর এসবই হচ্ছে ঐ মহাকালে এক সেকেন্ডের অতি সূক্ষ্মতর সময়ে। আমি মনেকরি, সময় মানেই হলো স্রষ্টাতত্ত্বের শুরু,যার শুরু নেই, শেষও হবেনা। এই সময় হলো মহাকালের ঘড়ি। শুরু আর শেষ আছে সৃষ্টির, স্রষ্টার বা সময়ের শুরুও নেই আবার শেষও হবেনা। এটা চিরন্তন সত্য ও চিরস্থায়ী মহাকালের চলমান ঘড়ি। যার আকার লুকিয়ে থাকে নিরাকার সময়ের ভিতর।
দেহ খাঁচারঃ
প্রচলিত প্রবাদ আছে-শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু, এই কাল বা সময়টি হলো একজীবন।  পৃথিবীর এক জীবনে একবার জন্ম এবং একবারই মৃত্যু হয়। এই সময় একজন মানুষ স্বাভাবিক নিয়ম মতে, শিশুকাল, কিশোরকাল, তরুনকাল,যৌবনকাল এবং বৃদ্ধকাল হয়ে জীবনের শেষকালের সমাপ্তি হয়। আবার কিছু মানুষ কালের ভিতর অকালেও জীবনের মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হয়। সেটা হতে পারে জন্মের পরপর, অথবা মাঝামাঝি যেকোন সময়ে। মানুষ জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়ে যে কাল অতিবাহিত করে তাকে এক কথায় জীবনকাল বলা হয়। কেন আমি বা তুমি এই পৃথিবীতে এসেছি ?
কিসের মোহে এখানে থেকে যেতে চাই ? জন্মের আগে কোথায় ছিলাম?
কোন আকারে ছিলাম ?  আমরা কি  নিরাকার ছিলাম ?  আমরা কি পৃথিবীতে আসার আগে অস্থিতহীন ছিলাম ?  এমন প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। আমি কোন এক ধর্ম মতের যুক্তিকে যদি তুলেধরি, তাহলে অন্য ধর্মের অনুসারীরা হয়তে মানতে চাইবেনা।  আবার যারা ধর্মই মানেনা, তারা বলবে, জীবনের আগে শূন্য আবার পরেও শূন্য। আমি আমার মতামত বলবো, আপনাকে মানতে হবে বা অমান্য করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাদকতা নেই। আমি মনে করি,  মানুষ হিসেবে মতামত দেওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। এই পৃথিবীটা আমার বা আপনার বা শুধু মানুষের নয়। এখানে বাচাঁর অধিকার সকল সৃষ্টিকুলের। সবাই নিজ যোগ্যতা বা ক্ষমতার আলোকে বেঁচে থাকতে পারবে, এমনটা আমি মনে করি। জন্ম ও মৃত্যু বিচার করলে সকল সৃষ্টিকুল হলে আগমন ও প্রস্থানকারী, কেউ স্থায়ী অধিবাসী নয়। পার্থক্য শুধু আগে এসে আগে যায়, পরে এসে পরে যায়। বয়সের বড় হওয়াটা কারো যোগ্যতা বা ব্যক্তিগত গুণ নয়। এটা হলো নিয়ম, পৃথিবীতে আমার বড় যেমন কোটি কোটি সৃষ্টি রয়েছে, ঠিক তেমনি ছোটও রয়েছে। দুনিয়ার বা পৃথিবীর মাঝে ছোট- বড় আছে, কিন্তু আমাদের আত্মা বা রুহ বা আমার ভিতরের আমি বা তোমার ভিতরের তুমির মাঝে কি ছোট- বড় আছে  ?  'না' নেই। এটা একটা স্পীড বা শক্তি বা হুকুম বা আদেশ বা অদৃশ্য প্রোগ্রামের শুরু।যেমন 'আলো',  এটা কোথায় থেকে আসে আবার কোথায় চলে যায় ?  অথবা 'অন্ধকার'। আচ্ছা ধরুন, আপনি একটা অন্ধকার কক্ষে আছে,  দরজা জানালা বন্ধ। বাহিরের আলো ভিতরে আসতে পারছেনা। এখন আপনি একটা প্রদীপ জ্বালানোর কক্ষটি আলোকীত হলো। বলুনতো গহীনকালো অন্ধকার কোথায় চলে গেল?  সেতো এতক্ষন আপনার সাথেই ছিল। আবার আপনি যখন প্রদীপটির আলো নিবিয়ে দিবেন, সাথে সাথে রুমটি অন্ধকার হয়ে যাবে। হঠাৎ কোথায় থেকে এলো এই অন্ধকার ?  সেতো ছিলনা। আমি বলছি, বন্ধ ঘরে বা রুমে আলো আর অন্ধকারে মতই আমাদের প্রাণ বা রুহ বা আমার ভিতর আমি আসি +জন্ম) এবং চলে (মৃত্যু) যাই। আলো আর অন্ধকার যেমন আমরা চিনতে পারিনা, ধরতে পারিনা, রাখতে পারিনা, নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা এবং এর যেমন আকার বা বয়স নির্নয় করা যাবেনা, ঠিক তেমনি রুহ বা প্রাণেরও বয়স নেই। সে শুধু ঐ বন্ধ ঘরের ভিতরে আলো আর অন্ধকারের মত করে আসে, কিছুকাল থাকে, আবার চলে যায়। আমাদের শরীল হলো একটা অন্ধকার বন্ধখাঁচা, রুহ বা প্রাণ আলো হয়ে জন্ম নেয়, আবার অন্ধকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে চলে যায়।   আসার আগে এবং যাওয়ার পরে তার অবস্থান হলো একটি শক্তি বা হুকুমের আকারে। আলোকে যেমন অন্ধকার দিয়ে ঢেকে রাখা যায়না, রুহুকে তেমনি খাঁচা দিয়ে আটকে রাখা যায়না। যেই গতিতে এসেছে, সেই গতিতে চলে যায়। পরিশেষে আমি বলবো,জন্ম হোক যথাতথা, কর্ম হোক ভালো।

লেখকঃ
মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস(অনার্স)এমএসএস(অর্থনীতি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। 

Saturday, December 15, 2018

বাংলার দানবীর ও মহামানব হাজি মুহাম্মদ মহসিনঃ মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া

বাংলার দানবীর ও মহামানব হাজি মুহাম্মদ মহসিনঃ
মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া

হাজি মুহাম্মদ মহসিন ১৭৩২ সালে পশ্চিম বঙ্গের হুগলিতে জন্মগ্রহণ করেন, তার বাবা হাজি ফয়জুল্লাহ ও মা জয়নাব খানম। ফয়জুল্লাহ ছিলেন একজন ধনী জায়গিরদার। তাঁর পূর্ব পুরুষের আদি নিবাস ছিল সুদূর ইরানের পারস্যে। সেখান থেকে ভাগ্য অন্বেষণে এসেছিলেন ভারত বর্ষে। তারপর স্থায়ীভাবে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি শহরে বসবাস শুরু করেন। জয়নব খানম ফয়জুল্লাহর দ্বিতীয় স্ত্রী। জয়নবেরও পূর্বে বিয়ে হয়েছিল। মন্নুজান খানম নামে তার ঘরে সাবেক স্বামী আগা মোতাহারের একটি মেয়ে ছিল। আগা মোতাহার বিপুল সম্পদের মালিক ছিলেন। হুগলি, যশোর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায় তার জায়গির ছিল। আগা মোতাহারের সম্পত্তি তার মেয়ে মন্নুজান উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জন করেছিলেন।
গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে মহসিন ও তার সৎ বোন মন্নুজান শিক্ষার্জন করেছেন। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজধানী মুর্শিদাবাদে যান। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি দেশভ্রমণের সফরে বের হন। সফরকালে তিনি হজ পালন করেন এবং মক্কা, মদিনা, কুফা, কারবালাসহ ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক এমন নানা স্থান সফর করেছেন।

১৮০৩ সালে মন্নুজানের মৃত্যুর মহসিন তার উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পদের মালিক হন। মহসিন খুব ধার্মিক ছিলেন এবং সহজসরল জীবনযাপন করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন চিরকুমার। তার বিপুল সম্পদ দান সদকায় ব্যয় করতেন। ১৭৬৯-৭০ সালের সরকারি দলিল অনুযায়ী তৎকালীন দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অনেক লঙ্গরখানা স্থাপন করেন এবং সরকারি তহবিলে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।১৮০৬ সালে তিনি মহসিন ফান্ড নামক তহবিল প্রতিষ্ঠা করে তাতে দুইজন মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করেন।ব্যয়নির্বাহের জন্য সম্পত্তিকে নয়ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি ভাগ ধর্মীয় কর্মকাণ্ড, চারটি ভাগ পেনশন, বৃত্তি ও দাতব্য কর্মকাণ্ড এবং দুইটি ভাগ মোতাওয়াল্লিদের পারিশ্রমিকের জন্য বরাদ্দ করা হয়।
হাজি মুহাম্মদ মহসিন ১৮১২ সালে হুগলিতে ইন্তেকাল করেন। তাকে হুগলি ইমামবাড়ায় দাফন করা হয়।
দানশীলতার কারণে তিনি কিংবদন্তীতে পরিণত হন এবং বর্তমানেও দানের ক্ষেত্রে তুলনা অর্থে তার দৃষ্টান্ত ব্যবহার হয়ে থাকে। পাঠকদের জন্য এই মহান ব্যক্তির কর্মময় জীবনের বিস্তারিত তুলেধরা হলো-

দানবীর হাজি মুহাম্মদ মহসিনের অবদান বাংলার ইতিহাসে অনস্বীকার্য। তিনি শুধু দানবীরই ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানুষের প্রতি মায়া-মমতার মূর্ত প্রতীক। মুসলমান জনগোষ্ঠীকে উচ্চ শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে ১৮০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘মহসিন ফান্ড’ নামক সংস্থায় গঠন করে তাঁর সর্বস্ব দান করেছিলেন। দান ও মহানুভবতার জন্য তার অবদান মানব ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

হাজি মুহাম্মদ মহসিনের মা জয়নব খানম ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের খাজাঞ্চি আগা মোতাহারের দ্বিতীয় স্ত্রী। ভাগ্যের অন্বেষণে ভারতবর্ষে আসা আগা মোতাহার সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান ছিলেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর ঘরে কোনো সন্তান না হওয়ায় তিনি জয়নব খানমকে সন্তান লাভের আশায় বিবাহ করেন। দীর্ঘ দিন পর মোতাহারের দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নিল কন্যা সন্তান মন্নুজান। আগা মোতাহার এক সময় তাঁর মেয়ের নামে তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দান করেন। মন্নুজান ছোট থাকায় এ দানপত্র তিনি একটি মাদুলিতে ভরে তাঁর গলায় পরিয়ে দেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর তা দেখার জন্য উপদেশ দেন।
আগা মোতাহারের মৃত্যুর পর মন্নুজান সবে মাত্র কৈশোরে পদার্পন করেছে। সে মাদুলি খুলে দেখেন আগা মোতাহার তার সমস্ত সম্পদ মেয়ের নামে লিখে দিয়ে গেছেন। যা দেখে জয়নব খান মন্নুজানকে হাতছাড়া করতে চাচ্ছিলেন না। পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করলেন আগ মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহকে। এ ঘরেই জন্ম গ্রহণ করেন দানবীর হাজি মুহাম্মদ মহসিন। তখন সৎ বোন মন্নুজানের বয়স ১৩ বছর। মন্নুজানও ভাই পেয়ে মহাখুশী। হাজি মুহাম্মদ মহসিনের লালন–পালন, দেখাশুনা ও বাল্য শিক্ষা মন্নুজানের তত্ত্বাবধানেই চলতে লাগলো।

স্থানীয় মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন হাজি মুহাম্মদ মহসিন। সেখানে তিনি আরবি ও ফারসি ভাষা শিখতেন। অল্প বয়সে তাঁর মেধা ও মনের গভীরতার পরিচয় পেয়ে শিক্ষকগণ অবাক হয়ে যান। চারিদিকে তার অসাধারণ মেধার কথা ছড়িয়ে পড়ে। পরে মুর্শিদাবাদের নবাব তাঁর মেধা কথা জানতে পেরে তাঁকে ডেকে পাঠান উচ্চ সরকারি পদ গ্রহণ করার জন্য। ইতোমধ্যে তাঁর পিতা মারা যান।

এদিকে বড়বোন মন্নুজান যৌবনে পদার্পন করেন। হাজি মুহাম্মদ মহসিন শিক্ষাকালে মন্নুজান হুগলিতে একাকি বাড়িতে থাকতেন। একদিকে তাঁর অনেক সম্পদ অন্য দিকে যুবতী মেয়ে। তাই কিছু দুষ্ট লোক তাঁর পেছনে ষড়যন্ত্র করতে লাগলো। মন্নুজান ষড়যন্ত্রের কথা জেনে ভাই হাজি মুহাম্মদ মহসিনকে পত্র পাঠান। পত্র পেয়ে হাজি মুহাম্মদ মহসিন বোনকে রক্ষায় বাড়ি ফিরে আসেন। ভাই মহসিনকে তিনি তাঁর সমুদয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেন। এবং
বোনকে সুপাত্রস্থ করার জন্য মহসিন চিন্তিত হয়ে পড়লেন। অবশেষে হুগলিতে নবাবের নিযুক্ত ফৌজদার সালাহউদ্দিনের সঙ্গে বোনের বিবাহ দিলেন। ধন–সম্পদের প্রতি নিরাসক্ত হাজি মুহাম্মদ মহসিন বোনের বিয়ের পর দেশ ভ্রমণে বের হন।
সফরকালে পবিত্র হজ পালন করে  মক্কা,মদিনা, কুফা, কারবালাসহ ইরান, ইরাক,আরব, তুরস্ক এমন নানা স্থান সফর করে দীর্ঘ ২৭ বছর পর দেশে ফিরে আসেন। তখন তাঁর বয়স ৬০ বছর। এদিকে নিঃসন্তান বোন মন্নুজান স্বামীকে হারিয়ে বিধবা। তিনিও বার্ধক্যে উপনীত। অন্যদিকে বিশাল সম্পদের মালিক আবার একাকি নিঃসঙ্গ। বোন মন্নুজান সম্পদের পেরেশানি থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ধ্যানে জীবন কাটাতে ছোট ভাইয়ের নামে তাঁর সমস্ত সম্পদ লিখে দেন। সম্পদ লিখে দেয়া কয়েক বছর পর ১৮০৩ সালে মন্নুজান ইন্তেকাল করেন। হাজি মুহাম্মদ মহসিন ছিলেন ধার্মিক, দয়ালু  এবং দানবীর, তিনি সহজ সরল জীবনযাপন করতে পছন্দ করতেন। ৭০ বছরের হাজি মহসিন এ বিপুল সম্পদ দান সদকায় ব্যয় করার মনস্থ করলেন এবং বিশাল সম্পদ মানবতার কল্যাণে ব্যয় করেন। দেশের সকল গরীব–দুঃখী ও দুঃস্থদের সেবায় তিনি নিজের সব সম্পদ বিলিয়ে দেন। ১৮০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘মহসিন ফান্ড’ নামক তহবিল প্রতিষ্ঠা করে তাঁর সমুদয় অর্থ এ ফাউন্ডেশনের জন্য দান করেন। এ ফান্ডের কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য দু'জন মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করেন। শুধু মোতাওয়াল্লি নিয়োগই নয়, মহসিন ফান্ডের ব্যয় নির্বাহের জন্য দানকৃত সম্পত্তিকে নয়ভাগে ভাগ করেন।
তন্মধ্যে তিনভাগ সম্পদ ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য। চারভাগ সম্পদ পেনশন, বৃত্তি ও দাতব্য কর্মকাণ্ডে খরচ করার জন্য এবং দুইভাগ সম্পদ মোতাওয়াল্লিদের পারিশ্রমিকের জন্য বরাদ্দ করেন। তাছাড়া তাঁর দানকৃত অর্থে অসংখ্য দারিদ্র্য ছাত্রের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়।
১৮০৬ সালে তিনি তাঁর প্রায় সমস্ত ভূ–সম্পত্তি একটি ওয়াকফ দলিলের মাধ্যমে দান করে যান। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই সম্পত্তির পরিচালনা নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম শুরু হয়। ১৮৩৫ সালে আদালতের মাধ্যমে আইনি ঝামেলা মিটিয়ে সরকার মহসিন ট্রাস্টের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৮৩৫ সালেই এই ট্রাস্টের অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয় হুগলী মহসিন কলেজ এবং এই কলেজের সাথে হাজী মুহসীনের অর্থে পূর্বে নির্মিত দুটি স্কুলকে মিলিয়ে দেয়া হয়। উল্লেখ্য এইটিই ভারতবর্ষের প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার কলেজ যেখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যেকেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতো। এর আগে ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু কলেজ ছিল শুধু ‘the sons of respectable Hindoos’ এর জন্য এবং ১৮১৮ ও ১৮২০ সালে প্রতিষ্ঠিত শ্রীরামপুর কলেজ ও বিশপস কলেজ ছিল খৃস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অক্ষয় চন্দ্র সরকার, স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী,শরৎচন্দ্র টট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ভুবনবিশ্রুত বাঙ্গালিরা সবাই এই হুগলী মহসিন কলেজের ছাত্র ছিলেন। অবশ্য ১৮৩৫ সালে ইংরেজ সরকার এর নাম হুগলী মহসিন কলেজ রাখলেও কোন এক কারণে দিনে দিনে মানুষের বলায় ও লেখায় এর নামটি দাঁড়ায় শুধু হুগলী কলেজ। মুহসীন শব্দটি ঝরে পড়ে যায়। ১৮৬০ সালের পরে কোনো কাগজপত্রে কিংবা সাইনবোর্ডে আর মুহসীন নামটা দেখাই যায় না। ১৯৩৬ সালে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় কলেজটি মূল নামে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সে দাবি অনুযায়ী সরকারিভাবে পুনরায় কলেজটির নাম হয় হুগলি মহসিন কলেজ।
মহসিন ট্রাস্ট তথা মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ড এর সৃষ্টি শুধু হুগলি মহসিন কলেজ নয়। হুগলিতে একটি হাসপাতাল নিয়মিতভাবে এই অর্থে চলছে। মহসিনের সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেটের অধিকাংশ জমি ছিল যশোর ও খুলনায়। এই ট্রাস্ট এস্টেটের জমিতে অনেকগুলো দাতব্য হাসপাতাল, সরকারি অফিস, খুলনা–কলকাতা রেললাইন ছাড়াও গড়ে ওঠে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। খুলনার দৌলতপুরের সরকারি ব্রজলাল কলেজের ৪২ একর জমির ৪০ একরই মহসিনের সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেটের জমি। ব্রজলাল কলেজের অনেক আগে ১৮৬৭ সালে মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ড এর অর্থে দৌলতপুরে তৈরি হয় একটি এ্যাংলো ভার্নাকুলার স্কুল। ১৯৩৯ সালে এর নামকরণ হয় দৌলতপুর মহসিন হাই ইংলিশ স্কুল। ১৮৮৬ সালে সরকারি অর্থে খুলনা জেলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কিছুদিনেই স্কুলটি অর্থাভাবগ্রস্ত হয়ে পড়লে সরকারি সেই স্কুলটির জন্যও সরকার মহসিনের সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেট থেকে অর্থ মঞ্জুর করেন। এছাড়াও মহসিনের সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেটের অর্থে খুলনার দৌলতপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় মহসিন বালিকা বিদ্যালয় ও মহসিন মহিলা কলেজ।

১৮৭৪ সালে মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ড এর অর্থে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে তিনটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকার মাদ্রাসাটি এখন সরকারি কবি নজরুল কলেজ ও চট্টগ্রামের মাদ্রাসাটি এখন হাজি মহম্মদ মহসিন কলেজ। আর রাজশাহীরটি এখন রাজশাহী গভর্নমেন্ট মাদ্রাসা নামে রাজশাহী বোর্ডের অধীনে ইসলামি শিক্ষা শাখায় আই এ সার্টিফিকেট প্রদানের প্রতিষ্ঠান রূপে চলছে।
নবাব আব্দুল লতিফ, নবাব খাজা আব্দুল গণি প্রমুখের আবেদন নিবেদনের ভিত্তিতে ১৮৭৩ সালে সরকার মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ডের অর্থে স্কলারশিপ মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সরকার আরো সিদ্ধান্ত নেয় যে-যশোর, রংপুর,পাবনা, ফরিদপুর, বাকরগঞ্জ, ময়মনসিংহ,নোয়াখালি ও সিলেট জেলার স্কুলগুলোতে মুসলিম ছাত্রদের দুই তৃতীয়াংশ বেতন ও একজন আরবি শিক্ষকের বেতন এই ফান্ড খেকে দেয়া হবে। ১৯৩১ সালে বেঙ্গল এডুকেশন কোড মহসিন ফান্ডের বৃত্তির পরিমাণ ও সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে দেয়।
ধন–সম্পদের প্রতি নির্লোভ বাংলার শ্রেষ্ঠ দানবীর হাজি মুহাম্মদ মহসিন ১৮১২ সালে ৭৯ মতান্তরে ৮০ বছর বয়সে হুগলির নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তাকে হুগলির ইমামবাড়ায় দাফন করা হয়।
এ মহান দানবীর তাঁর অসামান্য দানের কারণে কিংবদন্তীতে পরিণত হন। তাঁর স্মরণে হুগলিতে প্রতিষ্ঠিত হয় হুগলি কলেজ। বাংলাদেশের ‘চট্টগ্রাম সরকারি হাজি মুহাম্মদ মহসিন কলেজ’ প্রতিষ্ঠা হয় তাঁর ওয়াকফকৃত অর্থ থেকে প্রাপ্ত অনুদানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মহসিন হল’ এবং ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি ‘বিএনএস হাজি মহসিন’ও তাঁর স্মরণে নামকরণ করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে যেকজন দানবীর মহামানবের নাম আসবে, তাদের মধ্যে বাংলার মহান দানবীর ও মুসলিম শিক্ষাজাগরনের অগ্রদূত হাজি মুহাম্মদ মহসীন অন্যতম একজন। তিনি ছিলেন, ব্যক্তিজীবনে ধর্মপরায়ন এবং সামাজিক জীবনে দানবীর ও শিক্ষানুরাগী। বাংলা তথা ভারত বর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থায় হাজি মুহাম্মদ মহসীনের অবদান অতুলনীয় ও অনস্বীকার্য।

লেখকঃ
মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস (অনার্স) এমএসএস (অর্থনীতি)।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।  mohsinbhuiyan1980@gmail.com
01712-643172