Monday, December 24, 2018

ধ্যান হলো প্রভু প্রাপ্তির সূচনা পথঃ মুহাঃ মহসীন ভূঁইয়া


ধ্যান হলো পেশিক্রিয়া আর স্নায়ুর ক্রিয়ার শিথিলায়নের মাধ্যমে আত্মনিমগ্ন হওয়া অর্থাৎ দেহ আর মনকে নিয়ন্ত্রণ করে অস্থির মনকে স্থির করা ও মনোযোগ একাগ্র করার প্রক্রিয়া।
ধ্যান হলো দেহ আর মনের শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম। এটা এমন এক যোগ ব্যায়াম, দেহ থেকে দেহের কাম এবং মনের থেকে মনের কামকে নিয়ন্ত্রণ করে এক দৃষ্টি ও লক্ষ্যে নীরবে বসে সুনির্দিষ্ট অনুশীলন। ধ্যানের মাধ্যমে একদিকে মনোযোগ, সচেতনতা, নিজের প্রতি ভালোবাসা, সৃজনশীলতা, সুস্থতা ও প্রেম বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে কপটতা, হিংসা, কামুকতা, লোভ, অহংকার ও অসুস্থতা দুর করে মনকে স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে এবং প্রশান্তি ও সুখানুভূতি বাড়ানোর পাশাপাশি ঘটায় অন্তরের মহান জাগরণ।
ধর্মীয় শাস্ত্রে ধ্যান বলতে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে, মনকে মুক্ত করে কোনো ঐশী শক্তিতে সমর্পিত হওয়া প্রভৃতি, ইসলাম ধর্মের নিজের ভিতর নিজেকে খোজার মাধ্যমে প্রভুর খোজ করা বা আপন পরিচয় সন্ধানের জন্য প্রভুকে সন্ধান করার উত্তম মাধ্যম হলো ধ্যান। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির আগে, যখন দুনিয়াতে কুরআন, নামায, ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান আসেনি, তখন তিনি আপন মনে নিজের ভিতরে নিজেকে খোজার মাধ্যমে প্রভুর সন্ধান করার জন্য হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান করতে এবং সেখানেই তিনি আপন প্রভুর ঐশি জ্ঞান লাভ করেন এবং মানবতার কল্যাণের জন্য প্রভুর আদেশ প্রাপ্ত হন। সুতারাং ধ্যান হলো দেহ মনের এমন একটি রেখা, যেখানে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মহা মিলন হয়।
মানব ইতিহাসে সুনির্দিষ্টভাবে ধ্যানের উৎপত্তি কবে হয়েছে, তা অজানা থাকলেও প্রত্নতত্ত্ববিদ ও গবেষকগণ একমত যে, ধ্যান প্রায় ৫০০০ বছর আগে উৎপত্তি লাভ করেছিল। ধ্যান চর্চার সবচেয়ে প্রাচীন দলিল পাওয়া যায় প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের বেদে।টাও ও বুদ্ধের ধ্যান পদ্ধতির বিকাশ ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০-৫০০ সালে।  খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০-১০০ সালে পতঞ্জলির যোগসূত্রে প্রণীত হয় যেখানে অষ্টাঙ্গা ধ্যানের বর্ণনা পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ – খ্রিষ্টাব্দ ২০০ সালে ভগবদ গীতায় লিখিত হয়। যেখানে যোগ বা ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক জীবন যাপনের পদ্ধতি নিয়ে বর্ণনা রয়েছে। আবার মুসলমানদের ধর্ম গ্রন্থ আল কুরআনে নামায কে প্রভুর স্বরণে বান্দার ধ্যান বলা হয়েছে এবং গভীর রাতে প্রভুর জিকির বা স্বরণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে এবং নবী মুহাম্মদ (সঃ) নিজে হেরা পাহাড়ের উপর গুহার ভিতরে রাত - দিনে একা একা নির্জনে বসে ধ্যান করতেন।  ৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জাপানে প্রথম ধ্যান হল খোলা হয়। অষ্টাদশ শতকে ধ্যানের প্রাচীন শিক্ষার অনুবাদ পাশ্চাত্যে পৌঁছায়। বিংশ শতকে ধ্যানের বিভিন্ন মেথড উদ্ভাবিত হয়।
নিয়ম পদ্ধতির ভিন্নতা অনুসারে ধ্যানে প্রকারভেদ বিদ্যমান। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকার হলঃ-
যোগ ধ্যান, অষ্টাঙ্গা ধ্যান, চক্রভেদে ধ্যান, সুফি ধ্যান ও রেচক পূরকে ধ্যান।

মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস (অনার্স) এমএসএস (অর্থনীতি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments:

Post a Comment