Sunday, September 30, 2018

উন্নয়নের গণতন্ত্র ও রুপকথার কাহিনীঃ মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া

উন্নয়নের গণতন্ত্র রুপকথার কাহিনী।

বাংলাদেশের  উপর বর্তমানে স্বৈরাচারিনীর শাসন কায়েম রয়েছে, তারা জনগনের ভোটাধীকার হরণ করে অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছে, দেশে হত্যা, গুম-খুন, বিরোধী দলকে হামলা মামলা, কারাবরণ আর নির্যাতন দিয়ে দমন করতে চায়। দেশের শাসন ব্যবস্থার রুপ আজ বাকশালী একনায়কতন্ত্র ধারণ করেছে, স্বাধীন শাসন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সর্বোচ্চো খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, সফল রাষ্ট্রপতির স্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রধান সৈনিক,  স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার রুপকার, গণতন্ত্রের জননী,  বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন ও বৃহত্তম  রাজনৈতিক জোটের রুপকার বেগম খালেদা জিয়াকে আজ বিনা বিচারে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে কারাগারে বন্ধী করে রেখেছে। হত্যা করেছে বিএনপি- জামায়াত জোটের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে। হাজার হাজার মিথ্যা  মামলায় লক্ষ লক্ষ নেতা- কর্মী আজ কারাগারে।  স্বাধীনাতার পরে আজ দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে, দেশে অর্থব্যবস্থা ধ্বংসের শেষ সীমানায়, ব্যাংক ও ব্যবসা বানিজ্যে  চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে, গণতন্ত্রহীন উন্নয়নের নামে চলছে রাষ্ট্রিয় লুটতরাজ আর লুটপাটের হলি খেলা। সরকার নিজেদের আখের গোছাতে মহাব্যস্ত, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি আর দুঃশাসনের কারণে জনগন অস্থির। বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ রিজার্ভ চুরি , ডেসটিনির আর যুবকের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ, হলমার্কের ব্যাংক ঋনের  নামে লুটপাট, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যাংক জালিয়াতি, কুইক রেন্টালের নামে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, ফ্লাইওভার নির্মাণের অতিরিক্ত (তিনগুণ বেশি) ব্যয় করে দুর্নীতি, ভারতের স্বার্থে রামপাল বিদুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে সুন্দরবনকে ধ্বংসের পায়তারা, তিস্তা চুক্তিতে ব্যর্থ হয়েও ভারতকে অতি তোষামোদি করে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিট দেওয়া, বারবার গ্যাস বিদুৎ এর দাম বাড়িয়ে জনগনের অর্থলুট, রোহিঙ্গা সংকটে মায়ানমারের সাথে সফল আলোচনায় ব্যর্থতা, পিলখানা বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থতার দায়, উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গে চরমপন্থির উত্থান,  জঙ্গিবাদী নির্মূলে ব্যর্থতা, রাষ্ট্রীয় গুম-খুনের রেকর্ড সৃষ্টি, সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ সুবিশাল, সরকারের ভিতরের ব্যক্তিরা শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট। বিচার ব্যবস্থায় সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ, কারাগারে নির্যাতন করে হত্যা,  রিমান্ডের নামে বিরোধী কর্মী হত্যা, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গুলি চালানো, শাপলাচত্তরে হেফাযতের উপর নির্মম হত্যাকান্ড চালানো, মানবতা বিরোধীদের বিচারের নামে বিএনপি জামায়াতে শীর্ষনেতাদেরকে ফাঁসি দিয়ে রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের রেকর্ড সৃষ্টি।  শিশু ও নারী ধর্ষণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়া, বিচারবিহীনভাবে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে হত্যাকান্ড বা এন কাউন্টার। শাস্তিপ্রাপ্ত আসামীকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেওয়ার।  ছাত্রলীগ,  যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে ব্যাপক দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মানুষ আজ অতিষ্ঠ। শিক্ষা ব্যবস্থা আজ ধ্বংসের প্রান্তে, প্রতিযোগীতা মুলক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ধারাবাহিক সিরিয়াল ও ছাত্রলীগের বাণিজ্য।  মায়ের কোলের শিশু, পথচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দলীয় কোন্দেলের সংঘর্ষের গুলিতে নিহত হওয়া, বদরুল আর ঈশাদের কর্মকান্ড, ছাত্রলীগের হাতে প্রকাশ্যে বিশ্বজিৎ হত্যাসহ সংসদে দাড়িয়ে বিরোধী  দলকে গালাগালি আর ইতিহাস বিকৃত বক্তব্য দেওয়া, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জনসভায় বিকৃত ও অরুচিকর ভাষায় বক্তব্য দেওয়া, বিশ দলীয় জোটের প্রকাশ্য সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ আর অনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দিয়ে সরকার পরিচালনা। ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে এদেশের জনগনের সাথে প্রতারণা করেছে বর্তমান অনির্বাচিত সরকার। এছাড়া সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে গত ৫ই জানুয়ারী ভোটার বিহীন একটি প্রহসনের নির্বাচন করে, গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে নব্য বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতায় থাকাটাই আজ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের গণতন্ত্রঃ ও রুপকথা কাহিনী।

লেখকঃ
মুহাঃ মহসীন ভূঁইয়া
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ লেবার পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি।

Tuesday, September 25, 2018

ক্ষমতার পতন ও অপেক্ষার মিষ্টি ফলঃ মুহাঃ মহসীন ভূঁইয়া

ক্ষমতার পতন ও অপেক্ষার মিষ্টি ফলঃ

বিপদের শেষ সীমানায় বিড়াল বাঘের রুপ ধারণ করে, বাচার জন্য নিজের সর্বশক্তি দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে। গ্রামের প্রবাদ আছে, ইটটি মারলে পাটকেল খেতে হয়। বিজ্ঞানের চিরন্তন সত্য, প্রতিটি আঘাতে বা ক্রিয়ার সমান প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ক্রিয়াকারী হয়তো প্রতিক্রিয়ার কথা না ভেবে কাজ করে, নিজে প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও রাখতে পারে। এটা তার দাম্ভিকতার পরিচয়। আমরা যারা সাধারণ নাগরিক, নিজেরদের মত করে চলতে পছন্দ করি, সরকারি ব্যয়ের টাকায় চলিনা, সরকার যদি আমাদের নিয়ন্ত্রক হয়ে নিজের বাকশালী ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে চায়, বারবার বিভিন্ন ভাবে জনগণকে হয়রানি করে, স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণকে পরাধীনতার শিকল পরিয়ে রাষ্ট্রের গোলাম বা খাচার পাখি বানাতে চায়, জনগণ হয়তো স্বল্প সময়ের জন্য ধোকা খাবে, দীর্ঘকাল নয়। আমি বলছিনা, জনগণ অনেক চালাক। তবে জনতাকে বেশি বোকা ভাবাও ঠিক হবেনা। ইতিহাসের কালে কালে এদেশে অনেক বড় বড় রাজা মহারাজারা ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতায় বসেছে, শাসন করছে আবার চলেও গেছে। তবে সবার যাওয়া বা ক্ষমতা হারানোর কাল একরকম নয়, অনেক এসেছে সাদরে আর চলে গেছে অনাদরে। বাংলাদেশের ইতিহাসের স্রষ্টা,  স্বাধীনতার মহানায়ক ও সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আগমন হয়ছিল, একজন মহানায়কের মত করে, তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত শতভাগ সফল, অথচ এই মহান ব্যক্তি যখনই ক্ষমতার আসন গ্রহণ করলেন, তখন আর আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারলেননা, এদেশের ইতিহাসে একটি ভয়ংকর অধ্যায় রচনা হলো, উনার ক্ষমতার ইতি হতে। উনার মৃত্যুর পর তার সহযোদ্ধা মোস্তাক ক্ষমতা নিলো, তাকে বিদায় করছে বাংলার জনগণ। এরপর সায়েম সাহেব এসে বিদায় নিতে হলো। এলেন জিয়াউর রহমান, তাকেও এদেশের জনগণ বিদায় নিতে দেখেছে। তিনি কাছের মানুষের প্রতারণার কারণে রাতের অন্ধাকারে প্রাণ দিয়ে বিদায় নিলেন। এসেছে ইতিহাসে আরেক খলনায়ক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ, প্রায় নয় বছর বিভিন্ন নাটক আর অভিনয়ের ভিতর দিয়ে ক্ষমতায় ছিল। ভেবেছিল ক্ষমতার ফল চিরস্থায়ী,  অথচ তাকেও জনগণে গণআন্দোলনের মাধ্যমে হঠাৎ বিদায় নিতে হলো। এরপর বেগম জিয়া বিভিন্ন সময় তিনবার ক্ষমতায় এসেছে এবং ক্ষমতা হারিয়েছেন। এখন যিনি ক্ষমতায় আছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, তিনিও  ৯৬ তে ক্ষমতায় এসে ২০০১ সালে বিদায় নিয়েছিল। পরে আবার ২০০৯ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে এবং আজও টিকে আছেন। আমরা কি মনে করতে পারি ? তিনি আজীবন ক্ষমতায় থাকবে ?  তাকে আর কোনদিন ক্ষমতা হারাতে হবেনা ?  তিনি হবেন ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি, যিনি চিরস্থায়ী ভাবে বাংলার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবে।  আমি বলবো, "না"।  তাকেও বিদায় নিতে হবে আজ অথবা কাল। আমরা জনগণ হলাম ইতিহাসে নীরব সাক্ষী। কত ব্যক্তি এসেছিল, আরো কত আসবে আর যাবে, জনগণ ছিল, আছে এবং থাকবে। কালে কালে রাজার পরিবর্তন হয়েছে, হবে। প্রজা সবসময় সাক্ষী ছিল, আছে এবং থাকবে। অনেক মনকানা মহান ব্যক্তিকে বলতে শুনি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতা চিরস্থায়ী, আমৃত্যু।  যদি তাদের কথা সত্য ধরে নেই, তাহলে তিনি কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন ?  আরোও দশ নাকি বিশ বছর ?  আচ্ছা ধরলাম বিশ বছর। এরপর কি হবো ?  বিদায়তো নিতেই হবে। ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়াটাই হলো ইতিহাস। এই রেকর্ড কেউ ভাঙ্গতে পারেনি,কেউই পারবেনা। সে বঙ্গবন্ধু কন্যা বা অন্য কারো কন্যাই হোক না কেন। যার আগমন হবে, তার বিদায়কাল আসবেই। দেখার বিষয় হলো, বিদায়কাল কেমন হয় ? সেটাকি সুন্দর ফুলের পরসে ? নাকি ইতিহাসের ভয়ংকরী অধ্যায়ের মাধ্যমে ?  বয়ষ্ক ব্যক্তিদের বলতে শুনেছি, ক্ষমতার কাল যত দীর্ঘ হয়, বিদায়ী ঘন্টা নাকি ততবেশি ভয়াবহ হয় । আমরা ষোলো কোটি জনগণ সময়ের পরিক্রমায় ভালো আর মন্দের ভিতরে মিলেমিশে আছি থাকবো। তবে ক্ষমতার নায়ক বা নায়িকারা অবশ্যই বিদায় নিবেন, নিতে হবে। দেখায় বিষয় হলো, তাদের বিদায় নেওয়ার ফল জনগণের জন্য কতটা মিষ্টি ও মজাদার হয়। সবাইকে মিষ্টি ফলের জন্য অপেক্ষায় থাকার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

লেখকঃ
মোঃ মহসীন ভূঁইয়া
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ লেবার

Saturday, September 22, 2018

প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে বাংলাদেশ লেবার পার্টি

বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও হযরত মাওঃ আবদুল মতিন (রহঃ)

১৯৭৪ সালে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং চলছে, আলোচনার বিষয় দলীয়ভাবে বিভিন্ন দিবস পালন প্রসঙ্গ,  প্রস্তাবনা আসে মাও সেতুং, কাল মার্কস,  লেলিনসহ অনেকের জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনের। হঠাৎ করে একজন প্রস্তাব করেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম- মৃত্যু দিনটি পালন করার। কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই চুপ। একজন অন্যজনের মুখ দেখাদেখি করছে, সিদ্ধান্ত এলো "না"।  প্রস্তাবকারী উচ্চশোরে বলে উঠলো, যেখানে আমার প্রিয় নবীর অসম্মান হয়, যারা মুসলিম হয়ে অমুসলিমদের মত আচরণ করে, আমি তাদের সাথে নেই, থাকতে পারিনা, এবং থাকবোনা। একথা বলেই লোকটি বৈঠক থেকে আল্লাহু বলে উঠে দাঁড়ান। সেদিনের সেই লোকটি হলেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওঃ আবদুল মতিন (রহঃ) সাহেব। যিনি ছিলেন, একসাথে ইসলামিক পন্ডিত ও রাজনীতিবিদ।  ইসলাম ও জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ে এদেশে হযরত ওমর (রাঃ) মত করে সাম্যের সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। আর ওমরীয় সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, শোষণ ও দারিদ্রমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭৪ সাথে জাসদ থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও মেজর জলিলের একান্ত কাছের।  রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের বিরোদ্ধ তিনি ছিল সোচ্চার।  যে কারনে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। বাকশালের বিরোদ্ধেও  তার কন্ঠ ছিল সোচ্চার। পরবর্তীকালে পচাত্তরের কালো আইনের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করলে, এদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। লেবার পার্টি, জাসদ, মুসলিম লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ও হরণ করা হয় বাক স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশের উপর নেমে আসে অন্ধকারের কালোথাবা। আর এই অন্ধকার থেকে পুরোজাতি মুক্ত হয় ৭ই নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে। বিপ্লবের মহানায়ক হলেন, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। তিনি এসেই একদলীয় শাসনের উচ্ছেদ করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দল নিয়ে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠনে জিয়াউর রহমানের সাথে মাওঃ মতিন (রহঃ) এর মুখ্য ভুমিকা রাখেন।  জাতিকে মহামারি ও দুর্ভিক্ষপীড়ন থেকে রক্ষার জন্য ২০ দফা ঘোষণা করেন এবং আধুনিক চাষাবাদের জন্য খাল খননসহ নানামুখী কর্মকান্ড হাতে নেন। জিয়াউর রহমানে জাগদল গঠন করেন এবং হযরত মাওঃ আবদুল মতিন (রহঃ) সাহেবে গড়া সংগঠন লেবার পার্টি ও মাওঃ মতিন হয়ে উঠেন, জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক সহচর ও সহযোদ্ধা।  (চলবে)

লেখকঃ
মহসীন ভূঁইয়া
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ লেবার পার্টি

প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে বাংলাদেশ লেবার পার্টি

বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও হযরত মাওঃ আবদুল মতিন (রহঃ)

১৯৭৪ সালে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং চলছে, আলোচনার বিষয় দলীয়ভাবে বিভিন্ন দিবস পালন প্রসঙ্গ,  প্রস্তাবনা আসে মাও সেতুং, কাল মার্কস,  লেলিনসহ অনেকের জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনের। হঠাৎ করে একজন প্রস্তাব করেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম- মৃত্যু দিনটি পালন করার। কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই চুপ। একজন অন্যজনের মুখ দেখাদেখি করছে, সিদ্ধান্ত এলো "না"।  প্রস্তাবকারী উচ্চশোরে বলে উঠলো, যেখানে আমার প্রিয় নবীর অসম্মান হয়, যারা মুসলিম হয়ে অমুসলিমদের মত আচরণ করে, আমি তাদের সাথে নেই, থাকতে পারিনা, এবং থাকবোনা। একথা বলেই লোকটি বৈঠক থেকে আল্লাহু বলে উঠে দাঁড়ান। সেদিনের সেই লোকটি হলেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওঃ আবদুল মতিন (রহঃ) সাহেব। যিনি ছিলেন, একসাথে ইসলামিক পন্ডিত ও রাজনীতিবিদ।  ইসলাম ও জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ে এদেশে হযরত ওমর (রাঃ) মত করে সাম্যের সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। আর ওমরীয় সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, শোষণ ও দারিদ্রমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭৪ সাথে জাসদ থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও মেজর জলিলের একান্ত কাছের।  রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের বিরোদ্ধ তিনি ছিল সোচ্চার।  যে কারনে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। বাকশালের বিরোদ্ধেও  তার কন্ঠ ছিল সোচ্চার। পরবর্তীকালে পচাত্তরের কালো আইনের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করলে, এদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। লেবার পার্টি, জাসদ, মুসলিম লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ও হরণ করা হয় বাক স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশের উপর নেমে আসে অন্ধকারের কালোথাবা। আর এই অন্ধকার থেকে পুরোজাতি মুক্ত হয় ৭ই নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে। বিপ্লবের মহানায়ক হলেন, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। তিনি এসেই একদলীয় শাসনের উচ্ছেদ করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দল নিয়ে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠনে জিয়াউর রহমানের সাথে মাওঃ মতিন (রহঃ) এর মুখ্য ভুমিকা রাখেন।  জাতিকে মহামারি ও দুর্ভিক্ষপীড়ন থেকে রক্ষার জন্য ২০ দফা ঘোষণা করেন এবং আধুনিক চাষাবাদের জন্য খাল খননসহ নানামুখী কর্মকান্ড হাতে নেন। জিয়াউর রহমানে জাগদল গঠন করেন এবং হযরত মাওঃ আবদুল মতিন (রহঃ) সাহেবে গড়া সংগঠন লেবার পার্টি ও মাওঃ মতিন হয়ে উঠেন, জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক সহচর ও সহযোদ্ধা।  (চলবে)

লেখকঃ
মহসীন ভূঁইয়া
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ লেবার পার্টি

Wednesday, September 19, 2018

নিয়মিত কলাম

ধ্যান কি ও কেন ?

                (মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া)

ধ্যান হলো পেশিক্রিয়া আর স্নায়ুর ক্রিয়ার শিথিলায়নের মাধ্যমে আত্মনিমগ্ন হওয়া অর্থাৎ দেহ আর মনকে নিয়ন্ত্রণ করে অস্থির মনকে স্থির করা ও মনোযোগ একাগ্র করার প্রক্রিয়া।
ধ্যান হলো দেহ আর মনের শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম। এটা এমন এক যোগ ব্যায়াম, দেহ থেকে দেহের কাম এবং মনের থেকে মনের কামকে নিয়ন্ত্রণ করে এক দৃষ্টি ও লক্ষ্যে নীরবে বসে সুনির্দিষ্ট অনুশীলন। ধ্যানের মাধ্যমে একদিকে মনোযোগ, সচেতনতা, নিজের প্রতি ভালোবাসা, সৃজনশীলতা, সুস্থতা ও প্রেম বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে কপটতা, হিংসা, কামুকতা, লোভ, অহংকার ও অসুস্থতা দুর করে মনকে স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে এবং প্রশান্তি ও সুখানুভূতি বাড়ানোর পাশাপাশি ঘটায় অন্তরের মহান জাগরণ।
ধর্মীয় শাস্ত্রে ধ্যান বলতে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে, মনকে মুক্ত করে কোনো ঐশী শক্তিতে সমর্পিত হওয়া প্রভৃতি, ইসলাম ধর্মের নিজের ভিতর নিজেকে খোজার মাধ্যমে প্রভুর খোজ করা বা আপন পরিচয় সন্ধানের জন্য প্রভুকে সন্ধান করার উত্তম মাধ্যম হলো ধ্যান। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির আগে, যখন দুনিয়াতে কুরআন, নামায, ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান আসেনি, তখন তিনি আপন মনে নিজের ভিতরে নিজেকে খোজার মাধ্যমে প্রভুর সন্ধান করার জন্য হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান করতে এবং সেখানেই তিনি আপন প্রভুর ঐশি জ্ঞান লাভ করেন এবং মানবতার কল্যাণের জন্য প্রভুর আদেশ প্রাপ্ত হন। সুতারাং ধ্যান হলো দেহ মনের এমন একটি রেখা, যেখানে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মহা মিলন হয়।
মানব ইতিহাসে সুনির্দিষ্টভাবে ধ্যানের উৎপত্তি কবে হয়েছে, তা অজানা থাকলেও প্রত্নতত্ত্ববিদ ও গবেষকগণ একমত যে, ধ্যান প্রায় ৫০০০ বছর আগে উৎপত্তি লাভ করেছিল। ধ্যান চর্চার সবচেয়ে প্রাচীন দলিল পাওয়া যায় প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের বেদে।টাও ও বুদ্ধের ধ্যান পদ্ধতির বিকাশ ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০-৫০০ সালে।  খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০-১০০ সালে পতঞ্জলির যোগসূত্রে প্রণীত হয় যেখানে অষ্টাঙ্গা ধ্যানের বর্ণনা পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ – খ্রিষ্টাব্দ ২০০ সালে ভগবদ গীতায় লিখিত হয়। যেখানে যোগ বা ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক জীবন যাপনের পদ্ধতি নিয়ে বর্ণনা রয়েছে। আবার মুসলমানদের ধর্ম গ্রন্থ আল কুরআনে নামায কে প্রভুর স্বরণে বান্দার ধ্যান বলা হয়েছে এবং গভীর রাতে প্রভুর জিকির বা স্বরণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে এবং নবী মুহাম্মদ (সঃ) নিজে হেরা পাহাড়ের উপর গুহার ভিতরে রাত - দিনে একা একা নির্জনে বসে ধ্যান করতেন।  ৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জাপানে প্রথম ধ্যান হল খোলা হয়। অষ্টাদশ শতকে ধ্যানের প্রাচীন শিক্ষার অনুবাদ পাশ্চাত্যে পৌঁছায়। বিংশ শতকে ধ্যানের বিভিন্ন মেথড উদ্ভাবিত হয়।
নিয়ম পদ্ধতির ভিন্নতা অনুসারে ধ্যানে প্রকারভেদ বিদ্যমান। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকার হলঃ-
যোগ ধ্যান, অষ্টাঙ্গা ধ্যান, চক্রভেদে ধ্যান, সুফি ধ্যান ও রেচক পূরকে ধ্যান।

মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস (অনার্স) এমএসএস (অর্থনীতি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
mohsinbhuiyan1980@gmail.com

Monday, September 17, 2018

নিয়মিত কলাম

আদিবাসী অঞ্চলে সেটেলার বাঙ্গালী প্রেক্ষিত শান্তিচুক্তিঃ

মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া

আমি অনেক দিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিষয় লিখবো বলে ভাবছিলাম, কিছুদিন আগে এবিষয় সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা পোস্ট দেওয়ার পর অনেক পাঠক আমাকে বিভিন্ন বিষয় পরামর্শ ও সহযোগীতা করেছে, তাই প্রথমে তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজ যে বিষয়টি নিয়ে লিখতেছি, এটা বাংলাদেশের সামাজনীতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জড়িত। তাই প্রথমে ঐ এলাকাটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং বসবাসরত জনগোষ্ঠীর আগমনের কিছুটা চিত্র তুলে ধরার প্রয়োজন মনে করছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনপদটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি পাহাড় ও বনভূমি এলাকা। এখানের তিনটি জেলা রাঙামাটি , খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে পার্বত্য অঞ্চল। চট্টগ্রাম বিভাগের এই এলাকা পাহাড়, বনভূমি ও উপত্যকায় পূর্ণ বলে এর নামকরণ হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের আয়তনের এক দশমাংশ এই পার্বত্য এলাকা। মোট বনভূমির বিশাল অংশের এই অঞ্চল জুড়ে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম দিয়ে বয়ে চলা প্রধান নদী হল কর্ণফুলী । আর এই নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাইতে উৎপাদন হচ্ছে জলবিদ্যুৎ।

এই অঞ্চলটিতে প্রধানত বসবাস করেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সাইনো তিব্বতী মঙ্গোলয়ড ১৪ টি জাতিগোষ্ঠী, এরা বিভিন্ন কারণ ও গঠনার পরিক্রমায় এই অঞ্চলটিতে এসে বসবাস শুরু করেছেন। প্রায় ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ)জনসংখ্যার অভিবাসী উপজাতি প্রধান দু'টি হলো চাকমা ও মারমা উপজাতি। এছাড়াও আছে ত্রিপুরা তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখো, ম্রো, খিয়াং, বম,খুমি, চাক,গুর্খা, আসাম,সানতাল, এবং বিপুল সংখ্যক বহিরাগত বা স্যাটেলার বাঙ্গালী।
পার্বত্য অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল অধিকার করে শাসন করেছিলেন, ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করে নিজ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই এলাকা পুনর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রেখে শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। মুঘল সম্রাজ্যের অধীনে ১৬৬৬ হতে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবা বাংলার শাসন ছিল। ১৭৬০ সালে ইংল্যান্ড বা ব্রিটেনের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নেন। ১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়। ব্রিটিশরাই প্রথম এই এলাকার নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা হলে এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। আবার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের জেলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮০ এর দশকের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি জেলা - রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি নামে বিভক্ত করা হয়।

১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর এই অঞ্চলে কিছু পাহাড়ি উপজাতি সংগঠন বিভিন্ন দাবী নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তার মধ্যে কিছু কিছু প্রকাশ্যে পাহাড়িদের জন্য কাজ করে আবার কিছু সংগঠন গোপনে কাজ করেছে। তবে এসব সংগঠনের কর্মকান্ড বেশি প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ১৯৭৩ প্রতিষ্ঠিত হয়। (জে এস এস) হলো বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল যা চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের  উপজাতি  গোষ্ঠির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি স্বায়ত্তশাসন ও জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি এবং পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতির অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছে। ১৯৭৫ সালে এই দলটি নিজেদের গোপন সামরিক শাখা (শান্তিবাহিনী) প্রতিষ্ঠা করেন, এবং এরপর থেকে নিজেদের অধিকার আদায়ের ব্যানারে  সরকারি বাহিনী ও বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের সাথে লড়াই করে আসছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত প্রায় ২২ বছর এই বাহিনীর সাথে সরকারে বিভিন্ন বাহিনী ও সেটেলার ভাঙ্গালীদের অনেক বার রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়ছে। এসব সংঘাত সংঘর্ষের জন্য প্রধানত দায়ি সরকারের  দু'টি নীতি, এক- হঠাৎ করে সরকার বিভিন্ন স্হান থেকে ভাসমান অতি সাধারন নাগরিক ও শহরের বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসকারী  নিম্ন আয়ের বাঙ্গালী নাগরিকদের রাতে আঁধারে এনে পার্বত্য অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে দেন। দুই- ঐ অঞ্চলের পাহাড়ি ও সেটেলার ভাঙ্গালিদের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি  পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে দিয়েছিল। এছাড়া আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সরকার একচেটিয়া ভাবে পাহাড়িদের সাহায্যের নামে সামরিক সমর্থন দিয়ে উস্কানি দিয়েছিল এবং বাংলাদেশে ভুমিকে দিখন্ডিত করে দুর্বল রাষ্ট্রে বানাতে চেয়েছিল।  ১৯৯৭ সালে সরকার নিজ ভুখন্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, অতিতের নেওয়া পদক্ষেপ থেকে ফিরে এসে পাহাড়ি ও বাঙ্গালির মাঝে সংঘর্ষ বন্ধের লক্ষ্যে, সরকার ও উপজাতিয় পাহাড়ি সংগঠন (জে এস এস) একটি ঐতিহাসিক চুক্তি করেন। যে চুক্তির মূলত শান্তি বাহিনীকে নিরস্ত্রীকরন ও জে.এস.এসকে রাজনীতির মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য  হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে সরকারের সাথে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আর এই চুক্তিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিচুক্তি  বলা হয়।

এছাড়াও ১৯৭৩ সালে আগে অর্থাৎ জেএসএস সৃষ্টির পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা ছাত্রদের সংগঠন ছিল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতীয় কল্যাণ সমিতি যা ১৯৬০-এর দশকে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের আমলে-এ সংগঠিত হয়েছিল। রাঙামাটিতে কাপ্তাই বাঁধ নির্মানের ফলে অনেক অধিবাসী বাস্তুচ্যুত বা ভিটে মাটি হারা হয়েছেন, যাদের পক্ষে সেসময় সংগঠনটি প্রায় ১০০০০০ মানুষের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা যেমন, চাকমা রাজনীতিবীদ চারু বিকাশ চাকমা ও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এ অঞ্চলের মানুষের স্বায়ত্তশাসন এবং আদিবাসী স্বীকৃতির অধিকার দাবি করেন। লারমা ও অন্যান্য প্রতিবাদকারীরা বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়ার প্রতিবাদ করে যদিও সংবিধানে জাতিগত পরিচয় স্বীকৃত ছিল কিন্তু তারা বাংলাদেশ থেকে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ও বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের নীতি অনুযায়ী, বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষা একমাত্র স্বীকৃত এবং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সকলেই বাঙালি (পরে বাংলাদেশি) নামে পরিচিত। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে একটি পার্বত্য প্রতিনিধি দল দেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা করতে যান এবং শেখ মুজিব পার্বত্য জাতিগোষ্ঠীর বাঙালি পরিচয় গ্রহণের উপর জোড় দেন। এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ অঞ্চলের স্থানীয়দের দ্বারা বিদ্রোহ হওয়ার আশংঙ্কায় সর্বপ্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বসতি স্থাপন করে স্থানীয়দের সংখ্যা হ্রাস করতে চেয়েছিলেন। যার ধারাবাহিকতায় পরে জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকার একই ভাবে ঐ অঞ্চলটিকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভাসমান ভাঙ্গালি নাগরিকদের পার্বত্য এলাকায় সেটেল করেন এবং সরকারি বাহিনীর ও সেটেলার বাঙ্গালিরা যৌথভাবে পাহাড়ি বিদ্রোহীদের দমনের নামে সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। ১৯৯৭ সালের পূর্বে এই এলাকার চিত্র ছিল খুবই ভয়াবহ ও নাজুক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে জে এস এস সহ পাহাড়ি বিদ্রোহী শান্তিবাহিনীর সাথে শান্তিচুক্তি করেন। যদিও ততকালিন বিরোধী দল বিএনপিসহ জামায়ত এবং পার্বত্য  ভাঙ্গালীদের কিছু সংগঠন এই চুক্তির বিরোধীতা করেন। তবে এদেশের বেশিরভাগ জনগণ বহিবিশ্ব এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ সরকার এই ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি করার কারণে আজ প্রায় ২১ বছর পার্বত্য এলাকায় একটি সুন্দর ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। যদিও স্বাধীনতা পরবর্তী ২১ টি বছর বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকা পার্বত্য অঞ্চল ছিল নরকের মত। সাধারণ নাগরিকেরা ছিল শান্তিবাহিনী ও বাঙ্গালী সেটেলার বাহিনীর কাছে জিম্মি।  জ্বালাও পোড়াও আর হত্যা ছিল একটি নিয়মিত কর্মকান্ডের মত। ১৯৯৭ এর আগে পাহাড়ি উপজাতি ও বহিরাগত সেটেলার ভাঙ্গালী একে অপরকে শত্রু মনে করতো, রাতের আধারে হামলা পাল্টা হামলা ছিল তাদের নিয়মিত কাজ। সংবাদ মাধ্যম, বিদেশী সংস্থা ও পর্যটক শূন্য ছিল পার্বত্য অঞ্চল। ব্যবসা বাণিজ্য পিছিয়ে ছিল অঞ্চলটি।সরকার আর উপজাতিদের মাঝে বিশ্বাসের ছিল ব্যাপক ফারাক। এই জন্য একদিকে দায়ী ছিল, কিছু অতি উৎসাহি বিদ্রোহী উপজাতীয় সংগঠন এবং অপর দিকে সরকার অবিশ্বাস নীতির জন্য সেখানে ভাসমান বাঙ্গালীদের এনে বসতি স্থাপন করেছিল। বিদ্রোহীদের দমনের নামে সরকারি বাহিনীর দমন নিপীড়ন আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনপদ অনেকাংশেই পিছিয়ে পড়ে।পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অযাচিত উস্কানি মুলক ইন্ধন ও সাময়িক অস্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগীতা করে যুদ্ধ বাধাতে চেয়েছিল এবং ১৯৯৭ সালের আগে তারা অনেকটা সফলও বলা যায়। আমাদের প্রতিবেশীরা চেয়েছিল, ১৯৭১ অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে আবারও ভেঙ্গে নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হোক। অবশ্যই তারা ১৯৯৭ এর চুক্তির পর সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ, এবং ভবিষ্যতে ও সফল হবেনা(ইনশাআল্লাহ)।

মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস(অনার্স)এমএসএস (অর্থনীতি)।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
01712-643172