মানুষ এমন একটি প্রাণী বা জীব, যার মান ও হুশ রয়েছে। আকারে পরিবর্তনশীল প্রতিটি বস্তুর জীবন আছে, তবে সকল জীবনের মান ও হুশ নেই। যাদের মান আর হুশ আছে তাদেরকে সমাজে মানুষ বলে। আজকাল আবার কিছু কিছু মানুষের ভিতরে অমানুষের আত্মা ভরকরে আছে, আকার ও আওয়াজে মানুষের মত হলেও,এরা আসলে মানুষ নয়। এদের চেতনা শক্তি কম, ন্যায় ও অন্যায় এর মাঝে পার্থক্য বুঝেনা। সত্য মিথ্যার ব্যবধান করেনা, নিজেদের পক্ষে হলে হাসে আর বিপক্ষে গেলে গলা উছিয়ে কাশে। অনেকে আবার অতি বুদ্ধির ডেকোর তুলে অতি প্রগতিশীলতা অভিনয় করে। মানুষকে বিচার করে ধর্ম,বর্ণ,জাতির ও নীতির পরিচয়ে। সমাজ ব্যবস্থায় আজকাল এমন মানুষের অবস্থান ব্যাপক উন্নত স্তরে।রাষ্ট্রের উপর তলা থেকে নীচ তলায় এখন মান ও হুশ বিহীন অভিনেতা মানুষের সংখ্যায়ই বেশি। মানুষের মানবিকতা অমানুষের স্তরে চলে এসেছে। নিজের প্রয়োজনে একজন অন্যজনকে দাসের মত ভাবতে লজ্জাবোধ করেনা। পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র নিয়ে ভাবতে চায়না। জীবনের ধ্যান জ্ঞান নিজেকে নিয়ে, নিজের ভোগ ও সুখ নিয়ে। আত্মসুখ ও মনের শান্তির জন্য জগৎ জ্বালিয়েও এদের ভোগ মিঠেনা। আজকাল মানুষের বাহ্যিক রুপের সাথে শিকারি সিংহ ও হিংস্র হায়নার মানসিকতা যুক্ত হয়ে এক নতুন মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। এককথায় বলতে পারেন, শিকারি পশুরমত হিংস্র মানুষ। কাক কাকের মাংস না খেলেও, মানুষ কিন্তু ঠিকই মানুষের মাংস খায়। এরা কুপিয়ে কুপিয়ে খায়, পিটিয়ে পিটিয়ে খায়, পায়ের তলা দিয়ে পিষ্টে মানুষ মেরে খায়, হাতুরি দিয়ে চেঁচে চেঁচে নিজ বন্ধুর মাংসও খায়। নীতির পার্থক্য বা ধর্মের পার্থক্যের জন্য মানুষ নিজ প্রজাতিকে হত্যা করে খায়। দল বা আদর্শের জন্য একজন অন্যজনকে প্রকাশ্যে হত্যা করে নৃত্য করছে আর ধ্বংস করছে মানবতা ও মানসিকতাকে। আদর্শ, ধর্মীয় তকমা ও প্রগতির চেতনায় মানুষ হত্যা এখন স্বাভাবিক ও আইন সংগত ব্যাপার হয়ে গেছে। কেউ ক্ষমতায় থাকার জন্য মানুষের পোড়া মাংস খায়, আবার কেউ ক্ষমতায় আসার জন্য পোড়া মাংসের কাবাব খায়। স্বর্গ পাওয়ার আশায় মানুষ মানুষকে মেরে, মানুষকে কথার আঘাত দিয়ে সুখ পায় আবার কেউ কেউ স্বর্গীয় সুখের অনুভূতি পেতে মানুষের উপর বোমা মারে। জগতের আধুনিক রুপ তৈরি করতে এক মানুষ অন্য মানুষকে দাস বানিয়ে কাজ আদায় করছে। আধুনিক সভ্যতার ইমারত গুলোকে আজ রক্ত মাংসের ইমারত মনে হয়। এক সভ্যতার স্থায়িত্বের জন্য অন্য সভ্যতাকে মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিচ্ছে এজগতের অসভ্য ও মাংস লোভী হিংস্র মানুষ গুলো। এখন মানুষ হিংস্র জানোয়ার থেকে নিরাপদ হলেও, অতি আধুনিক প্রগতিশীল হিংস্র মানুষ থেকে নিরাপদ নয়। সমস্ত পৃথিবীকে এরা নিজ সুখ ও শান্তির জন্য খোদার নরক বানাচ্ছে। বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে শান্তির নিরাপদ শহরকে। এসব অমানুষদের বিষক্রিয়া এত মারাত্মক যে, আকাশ-বাতাস বিষের আগুনে জ্বলছে। এদের নীতি আদর্শ বা ব্যবস্থার বিরোদ্ধে কথা বললে, আপনাকে শুয়রের পালের মত আক্রমণ করবে। প্রয়োজনে আপনাকে থামাতে গুম,খুন বা হত্যার পথে নামবে। এরা নিজের পথ ও মতের জন্য অন্যের বুকে চুরি চালায়। আজ সমাজ রাষ্ট্র বা বিশ্বে এদের হিংস্রতার জোয়ার বইছে। এদের হাত থেকে আমি, আপনি, আমরা বা আমাদের জীবন নিরাপদ নয়। এদের প্রগতি বা ধর্মীয় উন্মাদনায় ৭১ সালে গণহত্যা, ৭২ ও ৭৩ এর গুপ্ত হত্যা, ৭৫ এর কালো হত্যা, জেলহত্যা, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের হত্যা, বিডিআর হত্যা, জঙ্গিবাহিনী বোমা হামলা, শাপলা চত্তরের হত্যা ও ২৮ অক্টোবরের প্রকাশ্যে মানুষ হত্যাসহ রাজনীতির নামে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা আজ সুস্থ সমাজকে অসুস্থ সমাজে পরিনত করেছে। এদের বাহিরের রুপ মানুষের আর ভিতরের রুপ জানোয়ারের।
লেখকঃ
মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস (অনার্স) এমএসএস (অর্থনীতি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
mohsinbhuiyan1980@gmail.com
মুহাম্মদ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস (অনার্স) এমএসএস (অর্থনীতি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
mohsinbhuiyan1980@gmail.com
No comments:
Post a Comment