বিশ্ব নবীর বিদায় হজ্জের ভাষণঃ (মুহাঃ মহসীন ভূঁইয়া)
নবী মুহাম্মদ (সঃ) আরাফাত ময়দানে ১০ যিলহজ্জ তারিখ কাসওয়া উটনীর পিঠে আসন গ্রহণ করেন, সে সময় প্রায় এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার সাহাবী তাঁর চারদিকে সমবেত ছিল। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লে মানবতার মহান মানব, হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ) বলেন-
হে লোক সকল, আমার কথা শোনো, আমি জানিনা, এবারের পর আমি তোমাদের সাথে এই জায়গায় আর মিলিত হতে পারবো কিনা।
তোমাদের রক্ত ও ধন-সম্পদ পরস্পরের জন্য আজকের দিন, বর্তমান মাস এবং এই শহরের মতই নিষিদ্ধ। শোনো মানুষ সকল, জাহেলিয়াত যুগের সবকিছু আমার পদতলে পিষ্ট করা হয়েছে। জাহেলিয়াতের খুনও খতম করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মধ্যকার প্রথম যে রক্ত আমি শেষ করেছি তা হচ্ছে, রবিয়া ইবনে হারেসের পুত্রের রক্ত। জাহেলী যুগের সুদ খতম করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মধ্যকার প্রথম যে সুদ আমি খতম করেছি তা হলো, আব্বাস ইবনে আবদুল মোত্তালেবের সুদ, এখন থেকে সুদ শেষ করে দেওয়া হলো। আর নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, তোমারা তাদের আল্লাহর আমানতের সাথে গ্রহণ করেছো, আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে হালাল করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার, তারা তোমাদের বিচানায় এমন কাউকে আসতে দিবেনা যাদের তোমরা পছন্দ করোনা। তোমাদের উপর তাদের অধিকার, তোমরা তাদের ভালো পানাহার ও পোশাক দিবে।
তোমাদের কাছে আমি এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা ধারণ করে থাকো তবে কখনও পথভ্রষ্ট হবেনা "তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব"।
মনে রেখো আমার পর কোন নবী নেই, তোমাদের পর কোন উম্মত নেই। আল্লাহর ইবাদত করবে, নামায আদায় করবে, রমজান মাসে রোজা রাখবে, আনন্দের সাথে নিজ সম্পদের যাকাত দিবে, আল্লাহর ঘরে হজ্জ করবে, নিজ শাসকদের আনুগত্য করবে, যদি এরুপ করো, তবে আল্লাহর জান্নাতে প্রবেশ করবে।
তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমরা কি বলবে ?
লক্ষ সাহাবী সমস্বরে বললেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি তাবলীগ করেছেন, পয়গাম পৌছে দিয়েছেন, কল্যাণ কামনার হক আদায় করেছেন। এ কথা শুনে বিশ্ব নবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) নিজের শাহাদাত আঙুল আকাশের দিকে তুলে লোকদের দিকে ঝুঁকে তিনবার বলেন, হে আমার রব, তুমি সাক্ষী থেকে।
তাঁর কথাগুলো হযরত রবিয়া ইবনে উমাইয়া ইবনে খালাফ উচ্চকণ্ঠে উপস্থিত সবার কাছে পৌছে দিচ্ছিলেন। আর আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর সেদিনের সাথীরা অঝোরে কান্না করছিলো। হযরত ওমর (রাঃ) কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, পূর্ণাঙ্গতার পরতো অপূর্ণাঙ্গতাই থেকে যায়।
ভাষণ শেষ করার পর আল্লাহ তায়ালা কুরআনের আয়াত নাযিল করেন- "আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাংগ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পর্ণ করলাম, ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম"।
(সুরা মায়েদা, আয়াত-০৩)
লেখকঃ
মুহাঃ মহসীন ভূঁইয়া
বিএসএস (অনার্স)
এমএসএস (অর্থনীতি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments:
Post a Comment